Thursday, August 6, 2009

আকস্মিক বিষক্রিয়ায় চারকোল

স্বাস্থ্যকুশল প্রতিবেদক
আকস্মিক বিষক্রিয়ার উপসর্গ

বাচ্চা কী ধরনের, কতটুকু পরিমাণ বিষাক্ত বস্তু খেয়ে ফেলেছে এর ওপর নির্ভর করে উপসর্গ দেখা দেয়। কিছু বিষাক্ত বস্তু আছে, যা খাওয়ার পর কিছু নগণ্য উপসর্গ দেখা দেয়। অন্যদিকে কিছু বিষাক্ত বস্তু খাওয়ার পর বমি বমি ভাব, বমি হওয়া, ঝিমুনি, মুখ ও খাদ্যনালি জ্বালাপোড়াসহ বেশ কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে। কিছু বিষ আছে, যেগুলো খুবই মারাত্মক এবং অল্প পরিমাণই ভয়ংকর সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে−যেমন খিঁচুনি, হূদ্যন্ত্র ও শ্বাসযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়া; এমনকি মৃত্যুও ঘটতে পারে। বাসাবাড়িতে মাঝেমধ্যে বড়রা কোনো কাজ করার সময় ভুলে বিভিন্ন জিনিস বাচ্চাদের নাগালে রেখে দেয়। তা দিয়ে আকস্মিক বিষক্রিয়া দেখা দিতে পারে। মাঝেমধ্যে বাচ্চারা উঁচু শেল্ফে রাখা জিনিসপত্রের প্রতিও কৌতূহল হয় এবং তা নাগালে পাওয়ার চেষ্টা করে, যা দিয়ে বিষক্রিয়া হতে পারে।

আকস্মিক বিষক্রিয়া বা অ্যাকসিডেন্টাল পয়জনিংয়ের শিকার বাচ্চারাই বেশি। অনিচ্ছাকৃতভাবে আকস্মিক বিষক্রিয়া হয়ে থাকে। বাচ্চারা খুব কৌতূহলী হয় এবং নতুন কোনো জিনিস পেলেই তা মুখে দিতে চায়। কিন্তু জিনিসটি ক্ষতিকর কি না তা বুঝতে পারে না। বড়রা টক বা তিতা স্বাদ থেকে বিষ এবং খাদ্যবস্তুর পার্থক্য ধরতে পারে। কিন্তু শিশুরা সেটা বুঝতে পারে না। আবার অনেক শিশু ট্যাবলেট ও ক্যাপসুলকে চকলেট মনে করে। মূলত ছেলেবাচ্চাদের বিষক্রিয়া হয় যাদের বয়স তিন বছরের নিচে। এই বয়সের বাচ্চারা খুবই কৌতূহলী হয় এবং তারা নিরাপদ কিংবা বিপজ্বনক বস্তুর তফাত ধরতে পারে না।

একটি বাসায় সচরাচর বিভিন্ন ধরনের ওষুধ−যেমন জ্বরের ওষুধ, ঠান্ডাকাশির ওষুধ, মাউথ ওয়াশ, অ্যান্টিসেপটিক, অ্যান্টিবায়োটিক, ঘুমের ওষুধ বা হূদরোগের ওষুধ থেকে থাকে।

আরও থাকে বিভিন্ন ধরনের সাবান, ডিটারজেন্ট, ব্লিচিং পাউডার, ডিশ ওয়াশিং পাউডার ইত্যাদি।

প্রসাধনীর মধ্যে থাকে বিভিন্ন ধরনের ক্রিম, লোশন, শ্যাম্পু, সুগন্ধি, আফটার শেভ ইত্যাদি। অন্যান্য জিনিসের মধ্যে থাকে কেরোসিন, সিগারেট, আঠা, ব্যাটারি, কীটনাশক ইত্যাদি।

ন্যাপথলিন প্রতিটি বাড়িতেই রাখা হয়, যা আকস্মিক বিষক্রিয়ার অন্যতম কারণ।

চিকিৎসা
বিষক্রিয়ার ধরনের ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হয়।
অ্যাকটিভেটেড চারকোল: এটি বিষকে পরিশোষণ করে শরীরে বিষের শোষণকে বাধা প্রদান করে এবং মলের সঙ্গে শরীর থেকে বিষ বের করে দেয়। কিন্তু এটি বিষ খাওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে খাওয়াতে হবে। তাই বাসায় সব সময় কিছু অ্যাকটিভেটেড চারকোল রাখা জরুরি। বাজারে আলট্রাকার্বন নামে জার্মানের তৈরি অ্যাকটিভেটেড চারকোল পাওয়া যায়। যেকোনো ভালো ওষুধের দোকানে আলট্রাকার্বন পাওয়া যাবে।

পর্যবেক্ষণ
কিছু বিষ আছে, যা একটু দেরি করে ক্রিয়া শুরু করে। তাই রোগীকে হাসপাতালে সম্ভব হলে দিনরাত পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। হূদ্যন্ত্র ও শ্বাসযন্ত্রের ক্রিয়া, রক্তচাপ ইত্যাদি সব সময় নজরে রাখতে হবে।

রক্ত পরীক্ষা
রক্তে বিষের পরিমাণ মাপতে হবে এবং তা পরবর্তী চিকিৎসা নির্ধারণ করতে সাহায্য করবে।
প্রতিবিষ বা অ্যান্টিডট: এই প্রতিবিষগুলো বিষের কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। অ্যাকটিভেটেড চারকোলও এই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত।

প্রতিরোধ

  • বিষক্রিয়ার ক্ষেত্রে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই বেশি কার্যকর। কিছু সাধারণ পদক্ষেপ একটি বাচ্চাকে বিষাক্ত বস্তু থেকে দূরে রাখতে পারে।
  • যাবতীয় ওষুধ, কীটনাশক, বাগান করার সামগ্রী ও রাসায়নিক দ্রব্য সব সময় বাচ্চাদের নাগালের বাইরে রাখতে হয়।
  • যাবতীয় আলমারি, শেল্ফ ইত্যাদিতে অবশ্যই তালা ব্যবহার করতে হবে।
  • বাচ্চাদের ওষুধ খাওয়ানোর আগে অবশ্যই মোড়কের গায়ে নাম ও ব্যবহার-প্রণালী দেখে নিতে হবে।
  • ওষুধ খাওয়ার সময় বাচ্চাদের আড়ালে খেতে হবে, যাতে তারা ওষুধ খাওয়া দেখে কৌতূহলী বা উৎসাহিত না হয়।
  • মায়েদের অবশ্যই হাতের ব্যাগ বাচ্চাদের নাগালের বাইরে রাখতে হবে। বাতিল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ব্যাটারি, বিষ, ওষুধ ও রাসায়নিক দ্রব্য সঠিক জায়গায় ফেলে দিতে হবে।
  • পানীয়র বোতলে বিষ বা রাসায়নিক বস্তু রাখা যাবে না।
  • বিষ ও ওষুধগুলো অবশ্যই নির্দিষ্ট মোড়কে বা বোতলে রাখতে হবে।
  • বাড়িতে অবশ্যই বিষাক্ত গাছপালা রাখা যাবে না। বাচ্চাপালক বা মা-বাবাদের প্রাথমিক চিকিৎসার প্রশিক্ষণ নেওয়া উচিত এবং একটি প্রাথমিক চিকিৎসার বাক্স বাড়িতে রাখা উচিত। সেটিতে আলট্রাকার্বন রাখতে হবে।
  • সর্বোপরি আকস্মিক বিষক্রিয়া থেকে প্রতিরোধ ও প্রতিকার তাৎক্ষণিকভাবে জানার জন্য নিকটবর্তী বিষক্রিয়া তথ্যকেন্দ্রের ফোন নম্বর জেনে রাখতে হবে।
আকস্মিক বিষক্রিয়া থেকে শিশুকে রক্ষা করতে হলে সতর্ক থাকাটাই সবচেয়ে ভালো উপায়।

আলট্রাকার্বনের সেবনবিধি
বিষক্রিয়ার জন্য কোনো রকম দ্বিধা ছাড়াই ৫০টি ট্যাবলেট গুলিয়ে পেস্ট বানাতে হবে এবং সেটি রোগীকে খাওয়াতে হবে এবং সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চাকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিতে হবে। পেস্টিসাইড বা কীটনাশকজনিত বিষক্রিয়ার ক্ষেত্রে আলট্রাকার্বন সেবন করা যাবে না।

সূত্রঃ প্রথম আলো- জুলাই, ২০০৯

0 comments: