Thursday, August 6, 2009

শিশুর জন্য ভিটামিন ‘এ’

তাহমীনা বেগম
অধ্যাপক, শিশু বিভাগ
ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ ও বারডেম

ভিটামিন সম্পর্কে একেকজনের ধারণা একেক রকম। ভিটামিনের অপর নাম হলো খাদ্যপ্রাণ, অর্থাৎ ভিটামিন হচ্ছে এমন একটি পদার্থ, যা আমাদের শরীরের জন্য এবং বেঁচে থাকার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ভিটামিনগুলো হচ্ছে−‘এ’, ‘বি’, ‘ই’, ‘কে’ এবং ‘বি’ কমপ্লেক্স। বিভিন্ন ভিটামিন শরীরের বিভিন্ন কাজে লাগে। শিশু, কিশোর ও বয়স্ক সব মানুষের খাদ্যকে সুষম করতে গেলে এর মধ্যে অবশ্যই ভিটামিন থাকতে হবে। শরীরের বিপাকক্রিয়ার চাহিদা পূরণের জন্য বাইরে থেকে খাদ্য হিসেবে বা আলাদাভাবে ভিটামিন সরবরাহ করতে হয়। যেমন−ভিটামিন ‘এ’ আমাদের দৃষ্টিশক্তির জন্য, এই সুন্দর পৃথিবীকে দেখার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এ ছাড়া এই ভিটামিন আমাদের চামড়া, খাদ্যনালি ও শ্বাসনালির আবরণ সুস্থ রাখে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

সবুজ ও রঙিন শাকসবজি, রঙিন ফলমূল, ছোট মাছ, ডিম, মাছের তেল, দুধ ও দুধ থেকে তৈরি করা খাবার, যেমন−পনির, মাখন, ঘি ইত্যাদিতে ভিটামিন ‘এ’ পাওয়া যায়।

আমরা সবাই জানি, ভিটামিন ‘এ’র অভাবে রাতকানা রোগ হয়, অর্থাৎ শিশু রাতের বেলা চোখে দেখতে পারে না। রাতকানা রোগ একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ের একটি সমস্যা, কিন্তু সময়মতো এর চিকিৎসা না হলে চোখের সামনের পর্দা শুকিয়ে যায়, চোখের কর্নিয়ায় ঘা হয়ে যায়, পরে চোখ অন্ধ হয়ে যায়।

রাতকানা, অন্ধত্ব ছাড়াও ভিটামিন ‘এ’র অভাবে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে শিশু ঘন ঘন নিউমোনিয়া, ডায়রিয়ার মতো মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয় এবং মৃত্যুবরণ করে। এ ছাড়া শিশুর বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং ত্বক খসখসে হয়ে যায়।
আপনারা জেনে অবাক হবেন যে এই সবুজ-শ্যামল বাংলাদেশে প্রতিবছর ৩০ হাজার শিশু ভিটামিন ‘এ’র অভাবে অন্ধ হয়ে যায়!
আমাদের দেশে সবুজ শাকসবজির অভাব নেই। এর পরও শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে শুধু মা, বাবা ও অভিভাবকের সচেতনতার অভাবে। তাঁরা অনেকেই জানেন না কোন খাবারে কোন ভিটামিন থাকে। আবার অনেকে জানলেও, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও তেমন গুরুত্ব দেন না। শহরের শিক্ষিত পরিবারের শিশুরাও শাকসবজি খেতে চায় না। ভিটামিন ‘এ’র অভাবে অন্ধত্ব প্রতিরোধ করার জন্য সরকারি পর্যায়ে কিছু কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। প্রথমত, শিশুর বয়স নয় মাস হলে হামের টিকার সঙ্গে একটি ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল (এক লাখ ইউনিট) খাওয়ানো হয়। দ্বিতীয়ত, এক থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের ছয় মাস পর পর একটি ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল (দুই লাখ ইউনিট) দেওয়া হয়। ছয় মাস পরপর যে কর্মসূচি নেওয়া হয়, সেখানে এক বছর বয়সের নিচের শিশুদের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানোর কোনো নিয়ম নেই। শুধু যদি শিশু হাম বা দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয় বা অপুষ্টিতে ভোগে, তাহলেই ভিটামিন ‘এ’ দেওয়ার নির্দেশ আছে।

অনেক সময় দেখা যায়, স্বাস্থ্যকর্মী বা যাঁদের ভিটামিন ‘এ’ খাওয়ানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাঁরা বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে বাড়ির সব শিশুকে ‘এ’ ক্যাপসুল খাইয়ে দেন। তাঁদের অনেকেই জানেন না বা তাঁদের হয়তো সেভাবে নির্দেশ দেওয়া হয় না যে এক বছর বয়সের কম বসয়ী শিশুদের ভিটামিন ‘এ’ দিতে হয় না।

সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি এ ব্যাপারে সচেতন হওয়ার অনুরোধ থাকল।

মায়েরাও খেয়াল রাখবেন, যাতে এক বছরের নিচের শিশুদের ‘এ’ ক্যাপসুল না দেওয়া হয়। ভিটামিন ‘এ’ বেশি মাত্রায় খাওয়ালে বা ছোট শিশুদের খাওয়ালে তাদের মধ্যে কিছু পাশ্র্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমন−বমি বমি ভাব, ঘুম ঘুম ভাব, মাথার তালু ফুলে খাওয়া, চোখের রেটিনা ফুলে গিয়ে দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, যা সাময়িক অন্ধত্ব। সুতরাং ভিটামিন ‘এ’ নিয়ে মনে রাখবেন−

  • অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি ভিটামিন ‘এ’ আছে এমন খাবার আপনার শিশুকে খেতে দিন।
  • আপনার শিশুর বয়স এক থেকে পাঁচ বছর হলে তবেই ছয় মাস পর পর ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ান।
সূত্রঃ প্রথম আলো, ২০০৯

0 comments: