Friday, August 7, 2009

পাকস্থলীর ক্যান্সার

যে সব ক্যান্সারের কারণে মানুষ মারা যায় তন্মধ্যে পাকস্থলীর ক্যান্সার অন্যতম। তবে আশার কথা হল এই যে- এ রোগটি প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয় করা গেলে এবং অপারেশনের মাধ্যমে ক্যান্সারের আক্রান্ত স্থান ফেলে দিলে রোগী সম্পূর্ণ রূপে ভাল থাকতে পারেন।

প্রাথমিক অবস্থায় হজম ক্রিয়ার গোলযোগ বা সচরাচর খাদ্য গ্রহণের পাকাশয়ের প্রান্তভাগে অস্বস্তি অনুভুতি বা Dyspepsia ছাড়া তেমন কোনো উপসর্গ দেখা যায় না। এর ফলে রোগী তেমন কোনো গুরুত্ব দেন না, অনেকে মনে করেন গ্যাষ্ট্রিক হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ খেয়ে অনেকে সাময়িক আরাম অনুভব করেন। ফলে ক্যান্সার পাকস্থলী থেকে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পায়। রোগটি ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ দেখা যায়-

  • অল্প খেলেই তৃপ্তি চলে আসে;
  • পেট ফেপে থাকে;
  • পেট ফুলে যায়;
  • বমি হয়;
  • রক্ত শূণ্যতা দেখা যায়;
  • খাদ্য গ্রহনে অন্ননালীতে ব্যথা অনুভব হয়;
  • শরীরের ওজন কমে যায়;
  • বমির সাথে রক্ত যায় কিংবা কালো পায়খানা হতে পারে।
যে ক্ষেত্রে অপারেশন করিয়েও রোগীর আয়ুষ্কাল খুব বেশী বাড়ানো যায় না। এ রোগটি সাধারণত চল্লিশোর্ধ বয়সেই বেশী হয়ে থাকে। নারীদের চেয়ে পুরম্নষেরা এ রোগে বেশী আক্রান্ত হন। যে সমস্ত কারণে পাকস্থলীতে ক্যান্সার হয় তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-
  • হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি নামক এক প্রকার জীবাণুর আক্রমন;
  • প্রচুর পরিমানে মদ্যপান;
  • যে সমস্ত খাবারে অত্যাধিক লবণ রয়েছে যেমনঃ কিছু কিছু সামুদ্রিক মাছ, দীর্ঘ দিন যাবৎ সংরক্ষিত টিনজাত খাবার;
  • যে সমস্ত খাবারে N-nitrous compounds রয়েছে কিংবা এন্টি অক্সিডেন্ট এর অভাব রয়েছে।
ধুমপায়ী লোক এবং যে পরিবেশে ডাস্ট বা ধূলাবালী বেশী সেখানে বসবাসকারীদের মধ্যে এ রোগ হতে পারে। কেউ কেউ মনে করে বংশগত কারণেও পাকস্থলীর ক্যান্সার হতে পারে।

পূর্বে জাপানে পাকস্থলী ক্যান্সারের কারণে বহুলোক মারা যেত। কিন্তু বর্তমানে চলিশোর্ধ বয়সের যে লোক হজম ক্রিয়ার গোলযোগে আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের ক্ষেত্রে এন্ডোস্কোপি করে প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয় করে ক্যান্সার অপারেশনের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয় এবং রোগী বাকী জীবন যাপন করতে পারেন।

কিন্তু আমাদের দেশে রোগীরা যখন ডাক্তারের শরনাপন্ন হন- তখন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ক্যান্সার পাকস্থলীর বাইরে ছড়িয়ে পরে। প্রাথমিক অবস্থায় পাকস্থলীর ক্যান্সার নির্ণয় করা গেলে অপারেশনের মাধ্যমে এ রোগ থেকে সম্পূর্ণ নিরাময় হওয়া যায়।

অধ্যাপক ডা. একেএম ফজলুল হক
বৃহদন্ত্র ও পায়ূপথ বিশেষজ্ঞ

চেম্বারঃ জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশীপ হাসপাতাল, ৫৫, সাত মসজিদ রোড, ধানমণ্ডি, ঢাকা। ফোনঃ ০১৭১৫-০৮৭৬৬১, ০১৭২৬-৭০৩১১৬।

দৈনিক ইত্তেফাক- আগস্ট, ২০০৯

0 comments: