Wednesday, August 19, 2009

শিশু প্রথম বছরে গরুর দুধ খাবে না

প্রণব কুমার চৌধুরী
সহকারী অধ্যাপক, শিশুরোগ বিভাগ
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

গরুর দুধ সব মানুষের জন্য পুষ্টি জোগানোর ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করে। এটি তেমন এক খাদ্য, যাতে আছে প্রোটিন বা আমিষের উচ্চমান আর ক্যালসিয়াম ফসফরাসের মতো খনিজ পদার্থে পূর্ণ। তবু বৈজ্ঞানিক বিবেচনায় ইনফ্যান্ট বা শিশুর প্রথম বছরে গাভির খাঁটি দুধ খাওয়ানো পরিহার করা শ্রেয়।

এক বছরের কম বয়সী শিশুর খাবার নির্দিষ্ট করতে পুষ্টিবিজ্ঞানীরা কিছু স্লোগানে ভর করে জনগণের কাছে যে বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন, পর পর সাজানো হলে তা এ রকমই দাঁড়াবে−

১. বুকের দুধ শিশুর জীবনে শ্রেষ্ঠ সূচনা,
২. ছয় মাস পর্যন্ত শিশুর জন্য শুধু মায়ের দুধ,
৩. ছয় মাস পূর্ণ হলে বুকের দুধের পাশাপাশি পরিপূরক খাবার, যথা−খিচুড়ি খাওয়ানো শুরু করা,
৪. গাভির দুধ বাছুরের জন্য, মানবশিশুর জন্য মায়ের দুধ।
অর্থাৎ শিশুর প্রথম বছরে গরুর দুধ মানবশিশুর জন্য আর আদর্শ খাদ্য নয়। প্রথম বছর শিশু গরুর দুধ খাবে না, খাবে মায়ের দুধ; সঙ্গে ছয় মাস বয়স থেকে স্বাভাবিক খাবার।

গরুর দুধ বনাম মায়ের দুধ
খাদ্যশক্তি বিচারে গরুর দুধ ও মায়ের দুধে সমতা থাকলেও পুষ্টিগুণ বিচারে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য।

  • গরুর দুধে শ্বেতসার বা ল্যাকটোজের মান প্রতি ডেসিলিটার ৪.৭ গ্রাম, মায়ের দুধে যা ৭.১ গ্রাম। মায়ের দুধের এ ল্যাকটোজ অন্ত্র থেকে ক্যালসিয়াম শোষণ করে নবজাত ও অল্পবয়সী শিশুর দেহ-অস্থি মজবুত করতে সহায়তা করে; সাহায্য করে গ্যালাকটোলিপিড তৈরির মাধ্যমে মস্তিষ্ককোষের বৃদ্ধি ও বিকাশ সাধনে। শিশু হয় বুদ্ধিমান ও স্বাস্থ্যবান।
  • গরুর দুধে আমিষ বা প্রোটিনের পরিমাণ খুব বেশি, যা প্রতি ডেসিলিটারে ৩.১ গ্রাম। এতে আছে ক্যাসিনের আধিক্য। আছে বিটা ল্যাকটোগ্লোবিনের উপস্থিতি। ফলে গরুর দুধ পানরত শিশু অ্যাকজিমা, আন্ত্রিক প্রদাহ ও মলে রক্তক্ষরণের সমস্যায় ভোগে। মায়ের দুধে প্রোটিন প্রতি ডেসিলিটারে ১.০৬ গ্রাম, শিশুর প্রয়োজনমতোই স্বাভাবিক।
  • গরুর দুধে চর্বি আছে প্রতি ডেসিলিটারে ৩.৮ গ্রাম, পরিমাণে তা মায়ের দুধের চেয়ে কম। আর নেই অতিজরুরি ফ্যাটি এসিড, যা শিশুর মস্তিষ্কের বৃদ্ধি বিকাশের জন্য একান্ত জরুরি।
  • গরুর দুধে সোডিয়ামের মাত্রা প্রতি ডেসিলিটারে ০.৭৭ গ্রাম, যা মায়ের দুধের চার গুণেরও বেশি। ক্যালসিয়াম ০.৪ গুণ, পটাশিয়াম ৩ গুণ ও ফসফরাস প্রায় সাড়ে ৬ গুণেরও বেশি। শুধু প্রয়োজনীয় জিংক ছাড়া অন্যান্য খনিজ পদার্থ, যেমন ম্যাগনেশিয়াম প্রভৃতি আছে বেশি মাত্রায়। এক বছরের কম বয়সী শিশুকে গরুর দুধ খাওয়ানো হলে এই অতিরিক্ত মাত্রার আমিষ ও খনিজ পদার্থ নিষ্কাশনে কিডনি বহু বিপত্তির সম্মুখীন হয়। গরুর দুধে অল্পবয়সী শিশুতে শোষিত হওয়ার মতো আয়রন কম পরিমাণে থাকে। ফলে এ বয়সে গরুর দুধ পানরত শিশু রক্তস্বল্পতার শিকার হয়।
  • গরুর দুধে কমবয়সী শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় ‘এ’ ও ‘সি’ ভিটামিন আছে কম মাত্রায়, আর কম মাত্রায় আছে ভিটামিন ‘ই’। শিশুকে মায়ের দুধ না দিলে গরুর দুধে নির্ভরশীল শিশুর ভিটামিনের স্বল্পতাজনিত অসুখ, যেমন রাতকানা, স্কার্ভি প্রভৃতি হতে পারে।
  • মায়ের দুধে শিশুর জন্য রোগপ্রতিরোধক যে শক্তিকাঠামো মজুদ আছে, যেমন ইমিউনোগ্লোবিউলিন ও লিউকোমাইট, ম্যাকোনেজ, নিউট্রোফিল, যা নেই গরুর দুধে। তাই গরুর দুধ পানে নির্ভরশীল শিশু সহজে রোগে আক্রান্ত হয়।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, আগস্ট-২০০৯

সোয়াইন ফ্লু প্রতিরোধে চাই সম্মিলিত প্রচেষ্টা

অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরীর কলম থেকে
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস বারডেম হাসপাতাল, সাম্মানিক অধ্যাপক
ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা

বিশ্বজুড়ে মহামারির আশঙ্কা−এমন একটি সতর্কবাণী উচ্চারণ করল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এ বছর ১১ জুন। সংস্থাটি সংকেত দিল ইনফ্লুয়েঞ্জা-এ (এইচ১এন১) বিশ্বজুড়ে মহামারি হয়ে আসছে: সতর্কতার মান ৬-এ উন্নীত করা হলো। এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে নতুন এইচ১এন১ ভাইরাসের বিস্তারের ব্যাপকতা প্রতিফলিত হলো, ভাইরাসে রোগ গুরুতর কতখানি হলো, তা বিচার্য বিষয় ছিল না। ইতিমধ্যে ৭০টিরও বেশি দেশে ইনফ্লুয়েঞ্জাএ (এইচ১এন১) সংক্রমণের কথা শোনা গেছে, আর বিশ্বের নানা অংশে এইচ১এন১ সংক্রমণ জনগোষ্ঠীতে প্রাদুর্ভাবের কথাও জানা গেছে।

বিশ্বব্যাপী মহামারি হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ঘোষণার পর থেকে নতুন এইচ১এন১ ভাইরাস ক্রমেই আরও বিস্তার লাভ করতে থাকল।

এই ভাইরাস সংক্রমণের প্রতিবেদন পাওয়া গেল আরও অনেক দেশে, বর্তমানে প্রায় দ্বিগুণ। দক্ষিণ গোলার্ধে ফ্লুর প্রাদুর্ভাব যে ঋতুতে হয়, তাও এগিয়ে এল। আর জানা গেল নিয়মিত ফ্লুর সংক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে নতুন ইনফ্লুয়েঞ্জার সংক্রমণের কথাও। যুক্তরাষ্ট্রে এই এইচ১এন১ ভাইরাস সংক্রমণ গ্রীষ্নেও বেড়েছে। বড় রকমের প্রাদুর্ভাবও হচ্ছে।

এই ভাইরাস যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ঘটেছে। তবে বেশির ভাগ অসুস্থ মানুষ চিকিৎসা ছাড়াই ভালো হয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের (সিডিসি) ধারণা, রোগ আরও বাড়বে এবং যুক্তরাষ্ট্রে আরও মৃত্যু ঘটবে গ্রীষ্ন পেরিয়ে শীতকাল পর্যন্ত। নতুন এইচ১এন১ ভাইরাস, সেই সঙ্গে নিয়মিত ফ্লু, দুটি মিলে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হবে। ইনফ্লুয়েঞ্জা এইচ১এন১ ভাইরাস হলো শূকরের উৎস থেকে আসা একটি নতুন ফ্লু ভাইরাস। এই ভাইরাস সংক্রমণ প্রথম ঘটেছিল মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রে, ২০০৯ সালের মার্চ ও এপ্রিলে।

ধারণা করা হয়েছিল যে নতুন ইনফ্লুয়েঞ্জা-এ ভাইরাস ছড়ায় নিয়মিত ফ্লুর সংক্রমণের মতোই, মূলত ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের কফ ও হাঁচির মাধ্যমে। তবে সংক্রমিত বস্তু স্পর্শ করে হাত, নাক ও মুখে লাগালেও তা সংক্রমিত হতে পারে। নতুন এইচ১এন১ সংক্রমণ নানা রকমের উপসর্গ ঘটাতে পারে ফ্লু জ্বরের, যেমন−জ্বর, কফ, গলা খুসখুস, শরীরে ব্যথা, মাথা ধরা, গা শিরশির করা ও ক্লান্তি। অনেকের হয় বমি ভাব, বমি ও তরল মল।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম এইচ১এন১ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী সিডিসির ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় প্রমাণিত হলো এ বছর ১৫ এপ্রিল। দ্বিতীয় রোগী প্রমাণিত হলো এর দুই দিন পর। এতে বোঝা গেল, ভাইরাসটি একজন লোকের কাছ থেকে অন্যের দেহে সংক্রমিত হতে পারে।

নতুন পরিস্থিতিতে সিডিসি নানা রকম নির্দেশিকাও দিল
চিকিৎসকদের জন্যও এল গাইডলাইন। নতুন এইচ১এন১ ভাইরাস রোগী শনাক্ত করা, তাদের পরিচর্যা এবং ভাইরাসরোধী ওষুধ ব্যবহারের জন্য দেওয়া হলো অন্তর্বর্তী বিশেষ নির্দেশিকা। এ ধরনের রোগের প্রাদুর্ভাবে এসব ওষুধ ব্যবহারের অগ্রাধিকার দেওয়া হলো−ফ্লুতে আক্রান্ত ও হাসপাতালে ভর্তি রোগী, গুরুতর রোগের আশঙ্কা এমন লোক, গর্ভবতী মহিলা, ছোট শিশু এবং ডায়াবেটিস, হাঁপানি, হূদরোগ ও ফুসফুসের ক্রনিক রোগে আক্রান্ত লোককে।

জনগণের জন্যও এল নির্দেশিকা
ফ্লুজনিত উপসর্গে অসুস্থ হলে কী করা উচিত, সে সম্পর্কে নির্দেশিকা দেওয়া হলো জনগণের জন্য। কীভাবে ঘরে অসুস্থ লোকের পরিচর্যা করা যায়, নতুন ইনফ্লুয়েঞ্জার সংক্রমণ কমানোর জন্য মুখের মাস্ক ও রেসপিরেটর কী করে ব্যবহার করা যায়−এ নিয়েও নির্দেশিকা এল। জীবাণুর বিস্তার রোধে প্রত্যেকেরই প্রতিদিন নেওয়া উচিত প্রতিষেধক ব্যবস্থা, যেমন−বারবার হাত ধুয়ে ফেলা। যারা অসুস্থ তারা গৃহবাসী হয়ে থাকবে। বাইরে বেরোবে না কিছুদিন। আর রোগের আরও বিস্তার যাতে না হয় সে জন্য সুস্থ লোকের সঙ্গে সংস্পর্শ এড়িয়ে চলবে।

ভাইরাস পরীক্ষা করে দেখার জন্য পদ্ধতিও উদ্ভাবিত হয়েছে
এই নতুন এইচ১এন১ ভাইরাস শনাক্ত করার জন্য একটি পিসিআর রোগ-নির্ণয়ব্যবস্থা উদ্ভাবন করেছে সিডিসি। এটি প্রাপ্তি সাধ্য করা হচ্ছে সব দেশে।

টিকা: এ নিয়ে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সিডিসি ও আমেরিকান সরকার। সিডিসি শনাক্ত ও পৃথক করেছে নতুন এইচ১এন১ ভাইরাস। তবে টিকা আবিষ্কার সহজ নয়। এতে সময় লাগবে।

ইনফ্লুয়েঞ্জা: নিয়মিত তদারকির মাধ্যমে নতুন এই ভাইরাসের সন্ধান মিলেছে। দেখা যাচ্ছে, অনেক দেশে নতুন ফ্লু বেশি হচ্ছে।

  • দায়িত্ব ভাগ করে নিতে হবে সবার
  • সবাইকে জানতে হবে নতুন এই ফ্লু সম্পর্কে।
  • স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা সবাইকে এ সম্পর্কে অবগত করবেন এবং বাড়তি সংবাদ পাওয়ামাত্র সবাইকে জানাবেন।
  • যে স্থানে এর প্রাদুর্ভাব হয়, সেখানে প্রত্যেকে প্রতিদিন স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য ও নতুন ভাইরাসের বিস্তার রোধ করার জন্য যেসব পদক্ষেপ নেবেন:
  • কফ, কাশি বা হাঁচি দেওয়ার সময় নিজের নাক-মুখ টিস্যু নিয়ে ঢেকে নিতে হবে। ব্যবহারের পর এই টিস্যু আবর্জনার পাত্রে ফেলে দিতে হবে।
  • হাত দুটি বারবার সাবানপানি দিয়ে ধুতে হবে, বিশেষ করে কফ-কাশি বা হাঁচি দেওয়ার পর। অ্যালকোহলভিত্তিক হ্যান্ড ক্লিনার বেশ উপযোগী।
  • চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করা এড়াতে হবে। জীবাণু এভাবে ছড়ায়।
  • রোগীদের কাছাকাছি যাওয়া চলবে না।
  • ফ্লুর মতো অসুখে আক্রান্ত মনে হলে, লক্ষণ উপসর্গ শুরু হওয়ার পর সাত দিন অথবা লক্ষণ উপসর্গ মুক্ত হওয়ার পর আরও ২৪ ঘণ্টা, সে সময়টি দীর্ঘ, তত দিন ঘরে অবস্থান করতে হবে। এতে অন্যজন সংক্রমিত হওয়া বা ভাইরাসের আরও বিস্তার হওয়া রোধ হবে।
  • কোথাও ফ্লুর প্রাদুর্ভাব ঘটলে সে অঞ্চলে জনস্বাস্থ্য কতর্ৃপক্ষের পরামর্শমতো স্কুল বন্ধ করা, ভিড় এড়ানো এবং সামাজিক সম্মেলন বা মেলামেশা এড়ানোর মতো কাজ করতে হবে।
প্রচণ্ড তাপমাত্রায় জ্বর, জ্বরের সঙ্গে শ্বাসকষ্ট, হাঁচি, কাশি। এ হলো লক্ষণ। হাঁচি-কাশির সময় রুমাল, গামছা, কাপড়, টিস্যু দিয়ে নাক-মুখ ঢাকা, দিনে কয়েকবার সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলা। এমন লক্ষণ হলে বাড়িতে থাকা এবং চিকিৎসাকেন্দ্রে গিয়ে পরামর্শ নেওয়া। তবে জ্বর ছাড়াও এই ফ্লু হওয়ার খবর রয়েছে কিছু দেশের বেশ কিছু রোগীর।

আমাদের দেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা-এ এইচ১এন১ ভাইরাসে আক্রান্ত লোক পাওয়া গেছে কয়েকজন, যারা সবাই বিদেশ প্রত্যাগত। এই ভাইরাস সংক্রমণকে সফলভাবে মোকাবিলা করেছে দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে এ ব্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্টি, প্রতিরোধব্যবস্থা বজায় রাখা এবং তদারকি ও নজরদারি রাখতে হবে। গত পরশু পর্যন্ত যা খবর তা হলো, দেশে ৩৪ ব্যক্তি এতে আক্রান্ত। তবে এ সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। সরকার সব হাসপাতালে সোয়াইন ফ্লু ইউনিট গঠনের নির্দেশ দিয়েছে। এ রোগ হলে রোগীর নমুনা পরীক্ষা করা যেতে পারে মহাখালী রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআরএ) এবং আন্র্তজাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রে (আইসিডিডিআরবি)। তবে কেবল সরকার নয়, ফ্লু ঠেকাতে সবাইকে দলমতনির্বিশেষে এগিয়ে আসতে হবে।
লালা ও রক্ত পরীক্ষার জন্য ব্যবস্থা রয়েছে আইইডিসিআরএতে, চিকিৎসার জন্য ওষুধও রয়েছে সেখানে।

বর্তমানে একে এক নম্বর স্বাস্থ্য-সমস্যা হিসেবে চিহ্ণিত করে সবাইকে নিয়ে সরকার সোয়াইন ফ্লু মোকাবিলার উদ্যোগ নিয়েছে।

সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, আগস্ট-২০০৯

জরুরি পরামর্শ-ডায়াবেটিস

ডায়াবেটিস সম্পর্কে ভালোভাবে জানাকেও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের অন্যতম ব্যবস্থা বলে গণ্য করা হয়। এ জন্য কোন কোন অবস্থায় রোজা রাখা ঝুঁকিপূর্ণ, তা জানতে হবে এবং কী ধরনের জটিলতা দেখা দিলে কীভাবে সমাধান করতে হবে, তা রোগী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদেরও রমজানের আগেই শিখতে হবে।
মনে রাখতে হবে, সবার জন্য একই ব্যবস্থা প্রযোজ্য নয়। প্রত্যেক ডায়াবেটিক রোগীর অবস্থা অনুসারে আলাদা ব্যবস্থা নিতে হবে।
রোজার সময় রক্তে সুগারের পরিমাণ স্বাভাবিক রাখার জন্য রোগীর কী কী করণীয়, সে সম্পর্কে চিকিৎসক আপনাকে পরামর্শ দেবেন। বিশেষ করে হাইপোগ্লাইসেমিয়া যাতে না হয়, সে জন্য সব সময় সতর্ক থাকতে হবে।

  • রোজার সময় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ডায়াবেটিসের ওষুধ সমন্বয় করবেন না, এতে মারাত্মক পরিণতি হতে পারে।
  • রোজার সময় দিনে ও রাতে সুগার মাপা উচিত। ধর্মবিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে জানা গেছে, এতে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না।
  • সেহরির খাবার সেহরির শেষ সময়ের কিছু আগে খাওয়া উচিত। ইফতারের সময় বেশি চিনিযুক্ত খাবার খাবেন না।
  • রোজার সময় দিনের বেলা অতিরিক্ত ব্যায়াম করা উচিত নয়।
  • রোজার সময় রাতের বেলা পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত।

সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, আগস্ট-২০০৯

ডায়াবেটিক রোগীর রোজার প্রস্তুতি

মো. ফরিদ উদ্দিন
সহযোগী অধ্যাপক, অ্যান্ডোক্রাইন মেডিসিন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বেশির ভাগ ডায়াবেটিক রোগী রোজা রাখেন। ডায়াবেটিসের রোগী, যাঁরা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া রোজা রাখেন, তাঁরা বেশ কিছু জটিলতার সম্মুখীন হতে পারেন। বিশেষ করে রক্তে শর্করা বা চিনির স্বল্পতা (হাইপোগ্লাইসেমিয়া), রক্তে শর্করা বা চিনির আধিক্য (হাইপারগ্লাইসেমিয়া), ডায়াবেটিস কিটোএসিডোসিস ও পানিশূন্যতা। যাঁরা শুধু খাবার ও ব্যায়ামের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখেন, তাঁদের রোজা রাখার ঝুঁকি কম। যাঁরা মেটফরমিন ও গ্লিটাজোনস-জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করেন, তাঁদেরও এ সময় ঝুঁকি কম।

তবে যাঁরা সালফোনাইলইউরিয়া ও ইনসুলিন গ্রহণ করেন, তাঁদের ঝুঁকি বেশি। যাঁদের সামর্থয আছে, তাঁদের রোজা রাখতে ডায়াবেটিস কোনো বাধা নয়। তবে প্রয়োজন পূর্বপ্রস্তুতি। চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে রোজা রাখার প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন। ডায়াবেটিসের রোগীদের রোজা রাখা সহজ ও নিরাপদ। রোজা রাখা অবস্থায় রক্ত পরীক্ষা করা এবং প্রয়োজন হলে চামড়ার নিচে ইনসুলিন ইনজেকশন নেওয়া যেতে পারে। ধর্মবিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে আমরা জেনেছি, এতে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। সুতরাং এসব নিয়ম মেনে ডায়াবেটিক-রোজাদার রোজা রাখতে পারবেন। ডায়াবেটিসের সঙ্গে অন্য জটিলতা যাঁদের আছে, তাঁদের রোজা রাখা ঠিক নয়। এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো।


রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যাওয়া (হাইপোগ্লাইসেমিয়া)
দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার কারণে দিনের শেষভাগে স্বাস্থ্যের দিকে বেশি নজর দিতে হবে। অতিরিক্ত কাজ করায় রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যেতে পারে। বড় ধরনের শারীরিক বা কায়িক পরিশ্রম রক্তের গ্লুকোজের বড় একটা অংশ কমিয়ে দেয়। অতিরিক্ত ইনসুলিন অথবা ট্যাবলেট গ্রহণ করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। ইনসুলিন ও সিরিঞ্জ একই মাপের না হলে, বরাদ্দের চেয়ে খাবার খুব কম খেলে বা খাবার খেতে ভুলে গেলে এ অবস্থা হতে পারে।

হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ
অসুস্থ বোধ করা। বুক ধড়ফড় করা। শরীর কাঁপতে থাকা। চোখ ঝাপসা হয়ে আসা। অজ্ঞান হয়ে যাওয়া। খিদে বেশি পাওয়া। বেশি ঘাম হওয়া। শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা। অস্বাভাবিক আচরণ করা। খিঁচুনি হওয়া।

হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে কী করতে হবে
রোজাদার ডায়াবেটিক রোগীর এসব লক্ষণ দেখা দিলে অথবা রক্তে সুগারের পরিমাণ ৬০ মিলিগ্রামের (৩.৬ মিলিমোল) নিচে হলে রোজা ভেঙে ফেলতে হবে। পরবর্তী সময়ে কাজা রোজা রাখতে হবে। হাইপোগ্লাইসেমিয়া একটি জরুরি অবস্থা। এ রকম হলে রোগীকে সঙ্গে সঙ্গে চা-চামচের চার থেকে ছয় চামচ গ্লুকোজ বা চিনি এক গ্লাস পানিতে গুলে খাওয়াতে হবে। গ্লুকোজ বা চিনি না থাকলে যেকোনো খাবার সঙ্গে সঙ্গে দিতে হবে। রোগী অজ্ঞান হয়ে গেলে মুখে কিছু খাওয়ানোর চেষ্টা না করে গ্লুকোজ ইনজেকশন দিতে হবে এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

হাইপোগ্লাইসেমিয়া এড়ানোর উপায়
এমন খাবার ও ওষুধ খেতে হবে, যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রাকে স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখবে। খাবার ও ওষুধ খাওয়ায় সমন্বয় সাধন করতে হবে। নিচের নিয়মগুলো মেনে চললে হাইপোগ্লাইসেমিয়া এড়ানো সম্ভব। কঠিন শারীরিক বা কায়িক পরিশ্রমের কাজ বাদ দিতে হবে। কেননা, এটি কোনো রকম আভাস ছাড়াই রক্তে গ্লুকোজের মাত্রাকে অত্যন্ত নিম্নমুখী করে দেয়। দেরিতে ইফতার করায়ও এমন অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। বারবার ওষুধের মাত্রার হিসাব সংরক্ষণ করতে হবে, সেটি ইনসুলিন হোক কিংবা ট্যাবলেট। একইভাবে খাবারের পরিমাণেরও হিসাব রাখতে হবে, বিশেষ করে শর্করার পরিমাণ। এরপর এই হিসাব বিশেষজ্ঞ-চিকিৎসককে জানাতে হবে, যেন খাবারের মাধ্যমে রক্তে গ্লুকোজের প্রভাব উচ্চমাত্রা এবং ওষুধের সাহায্যে রক্তে গ্লুকোজের প্রভাব নিম্নমাত্রা এই দুইয়ের সমতা রক্ষা হয়।

গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যাওয়া (হাইপারগ্লাইসেমিয়া)
ডায়াবেটিস রোগে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে গেলে অনেক রকম জটিলতা সৃষ্টি হয়। ইনসুলিনের ঘাটতির কারণে কম সময়ে এসিটোন বেড়ে অবস্থা জটিল হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে প্রধান যে অবস্থাগুলো প্রকাশ পায়, সেগুলো হলো মাথা ঘোরা, দুর্বলতা, কখনো কখনো ঝিমুনি, বমি প্রভৃতি।
এ ছাড়া রক্তের গ্লুকোজের কার্যক্রম অনিয়মতান্ত্রিক হয়ে পড়ায় অতিরিক্ত প্রস্রাব, পিপাসা ও পানিশূন্যতা দেখা যায়। এ সময় রক্তচাপ নিম্নমুখী হয়, ত্বক শুকিয়ে যায়, প্রস্রাবে গ্লুকোজ বেশি মাত্রায় প্রকাশ পায় এবং সেই সঙ্গে প্রস্রাবে এসিটোন দেখা যায়। এ অবস্থায় যদি দ্রুত চিকিৎসা করানো না হয়, তাহলে কিটোএসিডোসিস হবে এবং রোগী বিপজ্বনক অবস্থায় পৌঁছাবে।
রোজা থাকা অবস্থায় এ রকম হলে রোজা ভেঙে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। কিটোএসিডোসিস ছাড়াও যদি রক্তের সুগার বিপজ্বনক অবস্থায় পৌঁছায় (১৬.৭ মিলিমোল/লি. বা ৩০০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার), তাহলে ত্বকের নিচে ইনসুলিন দিয়ে সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এতে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। পরবর্তী সময়ে শুধু ডায়াবেটিসের ওষুধ সমন্বয় করতে হবে।

সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, আগস্ট-২০০৯

Tuesday, August 11, 2009

বন্ধুত্ব সুস্থ জীবনের জন্য

মুনতাসীর মারুফ
চিকিৎসা কর্মকর্তা
মাদারগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জামালপুর

পারস্পরিক সম্পর্কের বাঁধন ছাড়া মানুষ কখনোই আধুনিক সভ্যতার এই স্তরে পৌঁছাতে পারত না। বর্তমানে হয়তো প্রস্তরযুগের মতো খাবার খুঁজতে বের হওয়ার জন্য বা হিংস্র শ্বাপদের আক্রমণ থেকে জীবন রক্ষা করতে একত্র হওয়ার প্রয়োজন তেমন পড়ে না, কিন্তু এ যুগেও সুস্থ, সুখী, দীর্ঘ জীবনের জন্য বন্ধুত্বের ভূমিকা অপরিসীম। অভিজ্ঞতা থেকে যেমন আমরা তা বুঝতে পারি, তেমনি বিজ্ঞানসম্মত গবেষণার মাধ্যমেও এই ভূমিকা প্রতিষ্ঠিত।

হূদ্যন্ত্রের সুস্থতার ওপর বন্ধুত্বের প্রভাব রয়েছে। সুইডেনের একদল গবেষক ১৩ হাজার ৬০০ জনের ওপর তিন বছর গবেষণা চালিয়ে দেখতে পান, যাদের বন্ধুবান্ধব কম বা নেই, তাদের ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৫০ শতাংশ বেশি। নিউইয়র্কের গবেষকেরাও এ বছর প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে জানিয়েছেন, বন্ধুহীন ব্যক্তিরা হূদরোগ, উদ্বেগজনিত রোগ ও বিষণ্নতায় বেশি ভোগে। বন্ধুত্ব কীভাবে হূদ্যন্ত্র বা আমাদের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে? উত্তরে ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জার্নাল অব দ্য ন্যাশনাল মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন-এ বলা হয়েছে, ভালো বন্ধুত্ব মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। এই মানসিক চাপের সঙ্গে সম্পর্ক আছে হূদরোগের। মানসিক চাপের ফলে রক্তনালির ভেতর প্রদাহের ঝুঁকি বাড়ে, যা পরবর্তী সময়ে রক্তের স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত করতে পারে; নালির ভেতর রক্ত জমে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে।

হামবোল্ট স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী তাশা আর হাউই বলেন, মানুষের ক্রমবিকাশের ধারা বা অভিব্যক্তিবাদেই রয়েছে এর উত্তর। মানুষ সামাজিক জীব। তাদের জন্নই হয়েছে সমাজবদ্ধ হিসেবে বাস করার জন্য। আর তাই সামাজিক বন্ধন দৃঢ়, এমন ব্যক্তিরা অন্যদের চেয়ে বেশি মানসিক প্রশান্তি অনুভব করে, যা সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন। ফলে তাদের হূদরোগ কম হয়, রোগ-প্রতিরোধক্ষমতা বেশি থাকে এবং চাপসঞ্চারী হরমোন কর্টিসোলের পরিমাণ দেহে কম থাকে। পিটসবার্গের কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শেলডন কোহেন বলেন, জীবনের কষ্টকর সময়গুলো মোকাবিলা করতে বন্ধু সহায়তা করে।

তারা চাপ মোকাবিলার জন্য মানসিক অবলম্বন হিসেবে দুঃসময়ে পাশে থাকে। যাদের সামাজিক যোগাযোগ বেশি, তারা অধিকতর আত্মবিশ্বাসী হয় এবং জীবন ও পরিবেশের ওপর নিজেদের পর্যাপ্ত নিয়ন্ত্রণ অনুভব করে। বন্ধুত্ব স্বাস্থ্যকর জীবনাচরণকেও উৎসাহিত করে। একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, সুখ সংক্রামক।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষকেরা বলেছেন, সুখ ব্যাপারটি সংক্রামক ভাইরাসের মতোই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে একজনের কাছ থেকে অন্যজনে ছড়ায়। সুতরাং আপনার ঘনিষ্ঠ বন্ধু যদি সুখী হয়, সে ক্ষেত্রে আপনারও সুখী হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। অপরদিকে সমাজবিচ্ছিন্ন, বান্ধবহীন জীবন একই সঙ্গে অসুস্থ ও অসুখীও। বয়সী একাকী ব্যক্তিরা উচ্চ রক্তচাপ ও নিদ্রাহীনতায় বেশি ভোগেন। অস্থিরতা ও উদ্বেগে আক্রান্ত হন। তাঁদের দেহে স্ট্রেস হরমোনের পরিমাণ বেশি থাকে। রোগ-প্রতিরোধক্ষমতা থাকে কম।

হার্ট অ্যাটাকের পর দ্রুত মৃত্যুর ঝুঁকি তাঁদের ক্ষেত্রে বেশি। শিকাগোর রাশ ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের গবেষকেরা দেখেছেন, একাকিত্বে ভোগা ব্যক্তিদের স্মৃতিভ্রংশ রোগ ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি দ্বিগুণ। ২০০৬ সালে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত তিন হাজার সেবিকার ওপর পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, ঘনিষ্ঠ বন্ধুহীন রোগীদের ক্যান্সারে মারা যাওয়ার ঝুঁকি, যাদের দশের অধিক বন্ধু আছে তাদের চেয়ে চার গুণ বেশি। একইভাবে, জরায়ুর ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের ওপর চালানো অন্য গবেষণায় প্রায় একই ধরনের ফল পাওয়া গেছে। বন্ধুত্বের যেসব উপকারিতার কথা বলা হচ্ছে, অবশ্যই মনে রাখতে হবে, সেগুলো ভালো বন্ধুত্বের ফল।

বিপথগামী বন্ধুরা অবশ্যই আপনার স্বাস্থ্যের জন্যও বড় হুমকি। যারা অনিয়ন্ত্রিত ও অসুস্থ জীবনাচরণে অভ্যস্ত, তারা আপনাকেও স্বাস্থ্যঝুঁকিপূর্ণ জীবন যাপনের পথে নিয়ে যেতে পারে। আপনি হয়ে পড়তে পারেন ধূমপায়ী, মাদকাসক্ত, শারীরিক বা মানসিকভাবে অসুস্থ। তাই সুস্থ, দীর্ঘ জীবনের জন্য খঁুজে নিন প্রাণবন্ত, সুখী, পরোপকারী, বিশ্বস্ত, ভালো বন্ধু; গড়ে তুলুন নির্মল বন্ধুত্ব।

সূত্রঃ প্রথম আলো, আগস্ট-২০০৯

তেজস্ক্রিয়তা থেকে গর্ভের শিশুকে বাঁচান

মো. তারিকুল ইসলাম রেডিওলজি ও ইমেজিং বিশেষজ্ঞ
এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট

গর্ভস্থ শিশু বিভিন্নভাবে তেজস্ক্রিয় রশ্মির সংস্পর্শে আসতে পারে। এ ক্ষেত্রে সাধারণত গর্ভস্থ শিশুর মা তেজস্ক্রিয় রশ্মির সংস্পর্শে আসেন এবং এরই একাংশ গর্ভস্থ শিশুর কাছে পৌঁছে যেতে পারে। আবার গর্ভবতী মা অনেক সময় চিকিৎসাগত কারণে তেজস্ক্রিয় পদার্থযুক্ত ওষুধ খেয়ে থাকেন, যা মায়ের মূত্রাশয়ের দেয়ালে অনেক দিন জমা থাকে এবং মূত্রাশয়ের পেছনে অবস্থিত জরায়ু ও ভ্রূণের ওপর তেজস্ক্রিয় রশ্মি ছড়িয়ে দিতে পারে।

সারা বিশ্বেই মানুষ প্রতিনিয়ত অল্পমাত্রায় তেজস্ক্রিয় রশ্মির সম্মুখীন হচ্ছে। একে বলা হয় প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তা। এর উৎস হচ্ছে প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয় পদার্থ, বিভিন্ন মহাজাগতিক রশ্মি, যা বায়ুমণ্ডল ভেদ করে ভূপৃষ্ঠে চলে আসে। প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তা অল্প মাত্রায় বিরাজ করে, তবে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ভূপৃষ্ঠের উচ্চতা যত বেশি হয়, এর মাত্রা ততই বাড়তে থাকে।

তেজস্ক্রিয় রশ্মির কার্যকর মাত্রার একককে বলা হয় মিলি সিভার্ট। সাধারণভাবে একজন মানুষ বছরে তিন মিলি সিভার্ট প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তার সম্মুখীন হয়। তিন মিলি সিভার্ট তেজস্ক্রিয়তা মা ও গর্ভস্থ শিশুর জন্য ক্ষতিকর মাত্রার চেয়ে অনেক কম। প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তা ছাড়াও একজন গর্ভবতী মা তেজস্ক্রিয় রশ্মি বা পদার্থের সম্মুখীন হতে পারে−এক্স-রে, সিটিস্ক্যান, ফ্লুরোস্কোপি (বিশেষ ধরনের এক্স-রে) পরীক্ষা করালে, ক্যানসার চিকিৎসার জন্য রেডিওথেরাপি গ্রহণ করলে কিংবা তেজস্ক্রিয় পদার্থযুক্ত ওষুধ গ্রহণ করলে।

একজন গর্ভবতী মা বেশি মাত্রায় তেজস্ক্রিয়তার সম্মুখীন হলে তাঁর গর্ভস্থ ভ্রূণ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সে জন্য গর্ভবতী মায়েদের এ ধরনের পরীক্ষা করাতে বা চিকিৎসা গ্রহণের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।

সাধারণভাবে বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে তেজস্ক্রিয়তার যে মাত্রা ব্যবহার করা হয়, তা প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তার তুলনায় অনেক বেশি। একবার বুকের এক্স-রে করালে একটা মানুষ যে পরিমাণ তেজস্ক্রিয়তার সংস্পর্শে আসে, তা প্রায় ১০ দিনের প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তার সমান, যার কার্যকর মাত্রা প্রায় ০.১ মিলি সিভার্ট। কিডনি ও মূত্রাশয় পরীক্ষার জন্য আইভিপি বা ইন্টর্্রাভেনাস পাইলোগ্রাম পরীক্ষায় ব্যবহূত তেজস্ক্রিয়তার পরিমাণ এক বছরের প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তার সমান।

পেটের সিটিস্ক্যান, খাদ্যনালির সিটিস্ক্যান (সিটি কোলোনোগ্রাফি) ও খাদ্যনালির এক্স-রেতে যে পরিমাণ তেজস্ক্রিয় রশ্মি ব্যবহার করা হয়, তা প্রায় তিন বছরের প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তার সমমাত্রার। একজন মানুষ মাথার সিটিস্ক্যান করালে যে মাত্রায় তেজস্ক্রিয়তার সম্মুখীন হন, তা প্রায় আট মাসের প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তার সমান। আবার বুকের সিটিস্ক্যান কিংবা মেরুদণ্ডের সিটিস্ক্যানে ব্যবহূত তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা প্রায় দুই বছরের প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তার সমমাত্রার।

আশার কথা হলো, রোগ নির্ণয়ে ব্যবহূত তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তার মাত্রার চেয়ে অনেক গুণ বেশি এটা ঠিক, কিন্তু ভ্রূণের বা গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতি হওয়ার জন্য যে পরিমাণ তেজস্ক্রিয়তার প্রয়োজন, তার তুলনায় অনেক কম। গর্ভস্থ ভ্রূণের ক্ষতি হওয়ার জন্য সাধারণভাবে ২০০ মিলি সিভার্ট তেজস্ক্রিয়তার প্রয়োজন। তবে ভ্রূণের বয়স দুই সপ্তাহের কম হলে ৫০ মিলি সিভার্ট তেজস্ক্রিয়তায় গর্ভপাত হয়ে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে বেশির ভাগ মা বুঝতেই পারেন না যে তিনি গর্ভবতী হয়েছিলেন। রোগ নির্ণয়ের জন্য যে পরীক্ষাগুলো করা হয়, এর মাত্রা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ১০ মিলি সিভার্টের চেয়ে কম হয়। সে ক্ষেত্রে তেজস্ক্রিয় রশ্মি দিয়ে এই পরীক্ষাগুলো সাধারণভাবে নিরাপদ। আবার একজন গর্ভবতী মা তেজস্ক্রিয় রশ্মি দিয়ে পরীক্ষা করালেই যে তা ভ্রূণের কাছে পৌঁছে যাবে, তা নয়। তেজস্ক্রিয় রশ্মি সরল পথে চলাচল করে, কাজেই জরায়ু ও এর আশপাশের অঙ্গের পরীক্ষা করালেই কেবল ভ্রূণ প্রত্যক্ষ তেজস্ক্রিয়তার সম্মুখীন হয়। দূরবর্তী অঙ্গের পরীক্ষা করালে কিছু বিক্ষিপ্ত রশ্মি ভ্রূণ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, তবে এর মাত্রা অনেক কম।

যেসব অঙ্গের পরীক্ষায় সরাসরি ভ্রূণে তেজস্ক্রিয়তা পৌঁছার সম্ভাবনা রয়েছে, এর মধ্যে আছে মেরুদণ্ডের নিচের অংশের এক্স-রে বা সিটিস্ক্যান, কিডনি ও মূত্রাশয় দেখার জন্য আইভিপি, জরায়ুর গঠন দেখার জন্য এক্স-রে হিস্টেরোসালফিঙ্গোগ্রাম, তলপেট বা হিপ-জয়েন্টের পরীক্ষা, ক্ষুদ্রান্ত ও বৃহদন্ত্রের পরীক্ষা ইত্যাদি।

তবে রোগ নির্ণয় ছাড়াও চিকিৎসার জন্য তেজস্ক্রিয় রশ্মি বা তেজস্ক্রিয় পদার্থ ব্যবহূত হতে পারে। সাধারণত ক্যান্সার চিকিৎসায় রেডিওথেরাপি ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া থাইরয়েডের ক্যান্সার বা হাইপার থাইরোয়েডিজমের জন্য তেজস্ক্রিয় পদার্থযুক্ত ওষুধ গ্রহণ করতে হয়। তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা এ ক্ষেত্রে বেশি হতে পারে কিংবা দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে, যা ভ্রূণের জন্য ক্ষতিকর।

গর্ভস্থ শিশুর ওপর তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব তার বয়স, তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা ও তেজস্ক্রিয়তার সময়ের ওপর নির্ভর করে। গর্ভস্থ শিশু যত কম বয়সে তেজস্ক্রিয়তার সম্মুখীন হয়, তেজস্ক্রিয়তার সংবেদনশীলতা তত বেশি থাকে; অর্থাৎ ক্ষতির আশঙ্কা, ব্যাপকতা বেশি থাকে; আবার তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা এবং বেশি সময় ধরে এর কার্যকারিতা থাকলে স্বভাবতই ক্ষতির আশঙ্কা বেশি।
গর্ভস্থ শিশু তেজস্ক্রিয়তার সম্মুখীন হলে তার জন্ন-পরবর্তী ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে এবং এ ক্ষেত্রে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা ও সময় যত বাড়বে, ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তত বাড়বে।

গর্ভধারণে সক্ষম যেকোনো নারীর চিকিৎসার প্রয়োজন হলে তাঁর চিকিৎসককে জানানো প্রয়োজন যে তিনি গর্ভবতী কি না অথবা গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসক প্রথমে গর্ভধারণের ব্যাপারে নিশ্চিত হবেন। তারপর রোগীর চিকিৎসাপত্র দেবেন। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসক গর্ভবতী মা ও ভ্রূণের জন্য ক্ষতিকর ওষুধ এবং তেজস্ক্রিয়তার ব্যবহার আছে, এমন পরীক্ষা ও ওষুধ যথাসম্ভব বাদ দেবেন।

অনেক সময় দেখা যায়, একজন মহিলা এক্স-রে, সিটিস্ক্যান ইত্যাদি পরীক্ষা করার পর বুঝতে পারেন, তিনি ওই পরীক্ষা করার সময় গর্ভবতী ছিলেন। এ ক্ষেত্রে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, কারণ রোগ নির্ণয়ে ব্যবহূত তেজস্ক্রিয় রশ্মির পরিমাণ অনেক কম থাকে, ফলে ক্ষতির ঝুঁকিও কম। আবার জরায়ুর দূরবর্তী অঙ্গ-প্রতঙ্গগুলোর পরীক্ষায় (যেমন−মায়ের মাথা, হাত, পা, বুকের পরীক্ষা) ভ্রূণের ওপর প্রত্যক্ষ তেজস্ক্রিয় রশ্মি পড়ার আশঙ্কা নেই। তবে অতি অল্প মাত্রায় কিছু বিক্ষিপ্ত রশ্মি ভ্রূণের সংস্পর্শে আসতে পারে এবং ক্ষতির আশঙ্কাও খুব কম।

যেসব ক্ষেত্রে ভ্রূণের ওপর সরাসরি তেজস্ক্রিয় রশ্মি পড়ার ঝুঁকি আছে, সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে বিকল্প পরীক্ষা বা চিকিৎসার চেষ্টা করা উচিত।

জরায়ুর বাইরের বিভিন্ন
অঙ্গ-প্রতঙ্গের পরীক্ষার ক্ষেত্রে পেটের ওপর তেজস্ক্রিয়তা প্রতিরোধক পর্দা (লেড অ্যাপ্রোন) রাখার জন্য মেডিকেল টেকনোলজিস্ট বা কর্তব্যরত যিনি আছেন তাঁকে অনুরোধ করুন।

গর্ভবতী অবস্থায় বিমান ভ্রমণ: দূরপাল্লার বিমানগুলো ভূপৃষ্ঠ থেকে অনেক উঁচু দিয়ে যাতায়াত করে। ভূপৃষ্ঠ থেকে যত ওপরে যাওয়া যায় ততই প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা বৃদ্ধি পায়। অল্প সময়ের জন্য অনিয়মিত বিমান ভ্রমণে গর্ভবতী মা বা ভ্রূণের ক্ষতির আশঙ্কা বেশ কম। তবে যাঁরা ঘন ঘন দূরপাল্লার বিমানে ভ্রমণ করে থাকেন, তাঁদের নিজেদের ওপর তেজস্ক্রিয়তার মাত্রার হিসাব রাখা প্রয়োজন।

এ ক্ষেত্রে নির্ধারিত সফটওয়্যারের সাহায্য নিতে হবে এবং প্রাপ্ত তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা অনুসারে কার্যতালিকায় পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে। এটা মনে রাখা প্রয়োজন, রোগ নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ওষুধ গ্রহণ, সব ক্ষেত্রেই কিছু ক্ষতি আর কিছু উপকারী দিক আছে।

উপকারের পাল্লা ভারী হলে তখনই কেবল নির্দিষ্ট পরীক্ষা করানো হয় এবং চিকিৎসাপত্র দেওয়া হয়। তেজস্ক্রিয়তারও কিছু ক্ষতিকর দিক আছে, তবে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শক্রমে এবং সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করলে এর থেকে আমরা সর্বোচ্চ উপকার পেতে পারি।

সূত্রঃ প্রথম আলো, আগস্ট-২০০৯

মন ভালো তো হূদযন্ত্র ভালো

আহমেদ হেলাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
হূদয় বা মন, এর সঙ্গে হূদ্যন্ত্রের সত্যিকারের যোগাযোগ কতটুকু, তা নিয়ে যতই বিতর্ক আর গবেষণা চলুক, এ কথা আজ নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত যে মনের সমস্যার সঙ্গে হূদরোগের একটা সম্পর্ক রয়েছে। ব্যক্তিত্বের ধরন, মনের অসুখ, চাপ, উৎকণ্ঠা, বিষণ্নতা ইত্যাদি মানসিক অবস্থা হূদরোগের অন্যতম কারণ বলে আবিষ্কৃত হয়েছে।

সাম্প্রতিককালে এ নিয়ে বিশ্বব্যাপী বহু গবেষণা হচ্ছে, মনের সমস্যার সঙ্গে হূদরোগের সম্পর্ক এখন প্রমাণিত সত্য, কিন্তু বিষয়টি আলোচিত হয়েছিল ১৯৫৪ সালে। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এইচ এফ ডাম্বার তাঁর ইমোশন অ্যান্ড বডিলি চেঞ্জ গ্রন্থে এ বিষয়ে গবেষণাপ্রসূত তথ্য দেন।

তিনি বলেন, আবেগের নানা রকম সমস্যা, মানসিক চাপ ও ব্যক্তিত্বের ধরন হূদরোগের অন্যতম একটি কারণ। তিনি সর্বপ্রথম ‘করোনারি পারসোনালিটি’ নামে ব্যক্তিত্বের প্রকরণ ব্যাখ্যা করেন এবং বলেন, এ ধরনের মানসিকতাসম্পন্ন ব্যক্তির হূদরোগ হওয়ার ঝুঁকি বহুগুণ বেশি। এ ধরনের ব্যক্তিত্বের আচরণকে পরে ১৯৬০ সালে ফ্রাইডম্যান ও রোসেনম্যান ‘টাইপ-এ আচরণ’ বলে উল্লেখ করেছেন।

পরবর্তী আরও গবেষণায় ১৯৭৫ সালে ফ্রাইডম্যান ও তাঁর সহযোগীরা তথ্য-উপাত্ত দিয়ে প্রমাণ করেন, যাদের মধ্যে টাইপ-এ আচরণ দেখা যায় বা যারা করোনারি পারসোনালিটির অধিকারী, তাদের হূদরোগ হওয়ার আশঙ্কা সাধারণ মানুষের চেয়ে আড়াই গুণ বেশি! কেমন আচরণ হয় করোনারি পারসোনালিটির মানুষের, আর টাইপ-এ আচরণই বা কী?

গবেষণায় এ ধরনের ব্যক্তিত্বের যে বৈশিষ্ট্য ও আচরণগুলো বের হয়ে এসেছে, তা হলো:

ক্রমাগত আবেগের সমস্যায় থাকা, সামান্য মনখারাপের বিষয়ে বেশি ভেঙে পড়া বা কোনো ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় অত্যধিক আবেগ প্রকাশ করা। সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে আশপাশের মানুষের চেয়ে সুবিধাবঞ্চিত থাকা। অতিরিক্ত কাজের চাপ ও কর্মপরিধির মধ্যে কোনো বিষয় নিয়ে মানসিক চাপ বোধ করা। কোনো কারণ ছাড়াই পারিপাশ্র্বিকতার প্রতি বৈরী ভাব পোষণ করা (যেমন−এ দেশের সবাই খারাপ, সব মানুষ লোভী, কেউ ভালো নয়, সবাই আমার শত্রু ইত্যাদি মনে করা)।

সব সময় একটা প্রতিযোগিতামূলক আচরণ করা, বেশি পরিমাণে উচ্চাভিলাষী হওয়া (যেমন−অমুকের চেয়ে আমার এ বিষয়ে ভালো করতেই হবে, ওর আগে আমার প্রমোশন হতেই হবে, আমার সন্তানকে ছবি অাঁকার প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার পেতেই হবে ইত্যাদি মনোভাব)। কারণে-অকারণে সব কাজে তাড়াহুড়ো করা। সব সময় একটা পূর্বনির্ধারিত ‘ডেডলাইন’ মাথায় রাখা যে এ সময়ের মধ্যে বিষয়টির নিষ্পত্তি হতে হবে, সময়মতো না হলে তীব্র মানসিক চাপে ভোগা। হুট করে রেগে যাওয়া, অধৈর্য হওয়া, খিটখিটে আচরণ করা। এ ধরনের আচরণ আর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ব্যক্তিরা আক্রান্ত হতে পারে হূদ্যন্ত্রের যেকোনো রোগে, বিশেষত রক্ত সরবরাহ-সংক্রান্ত জটিলতায় (ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ), যার প্রধান লক্ষণ হচ্ছে বুকে ব্যথা আর পরিণতিতে মৃত্যু।

এ তো গেল আচরণ আর ব্যক্তিত্বের কথা। এদিকে কিছু মানসিক রোগের সঙ্গেও সরাসরি হূদরোগের সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন গবেষকেরা।

যেমন উৎকণ্ঠা (অ্যাংজাইটি) আর অনিয়ন্ত্রিত রাগের কারণে হতে পারে এনজিনা বা ব্যথাযুক্ত হূদরোগ। তীব্র বিষণ্নতা ও উৎকণ্ঠার যদি চিকিৎসা করা না হয়, তবে এ দুটি রোগ থেকে হতে পারে ‘মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন’ নামের মারাত্মক হূদরোগ, যাতে মৃত্যুঝুঁকি অত্যন্ত বেশি। এ ছাড়া আরেকটি বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন যে বিষণ্নতা, সিজোফ্রেনিয়াসহ নানা রকম মানসিক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহূত দু-একটি ওষুধ হূদ্যন্ত্রের ওপর পাশ্র্বপ্রতিক্রিয়া করতে পারে। পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ ও হূদরোগ চিকিৎসায় ব্যবহূত কোনো কোনো ওষুধ বিষণ্নতাসহ আরও কিছু মানসিক সমস্যার কারণ হতে পারে।

সম্প্রতি আরেক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, যাদের সফলভাবে করোনারি বাইপাস সার্জারি বা হূৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, তাদের মধ্যে একটি বড় অংশ পরবর্তী ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে মাঝারি থেকে তীব্র বিষণ্নতা ও মানিয়ে চলার সমস্যায় (অ্যাডজাস্টমেন্ট ডিজঅর্ডার) আক্রান্ত হতে পারে, যা তাদের জীবনযাত্রার মান কমিয়ে দেয় ও মৃত্যুঝুঁকি বাড়ায়।

সে কারণে যুক্তরাষ্ট্রে এসব রোগীকে অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে হূদরোগ বিশেষজ্ঞের পাশাপাশি নিয়মিত মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হচ্ছে। হূদরোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় কেবল খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, ব্যায়াম আর ওষুধ সেবনই যথেষ্ট নয়; জীবনযাত্রার পরিবর্তন, আচরণের পরিবর্তন এবং সঠিক মানসিক সাম্যাবস্থাও প্রতিরোধ করতে পারে জীবনবিনাশী হূদরোগ। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে সবাইকে।

সূত্রঃ প্রথম আলো, আগস্ট-২০০৯

Friday, August 7, 2009

চুল যখন ঝরে

স্বাস্থজ্জ্বল সুন্দর চুল আমরা সবাই চাই। নানা রকম দুষন, মানসিকচাপ, অনিয়মিত খাদ্যগ্রহণ এবং অনিয়ন্দ্রিত জীবন যাপন, নানারকম অসুখ কিংবা ব্যক্তিগত কারনে বর্তমানে অনেক অনাবয়সীরই চুল ঝরে যাচ্ছে। চুল ঝরে যাচ্ছে কিংবা টাক সমস্যা নিয়ে যারা ব্যথা বলেন তারা নিচের সমস্যাগুলোর ব্যথা সাধারণত বলে থাকেন।

  • চুলের গোড়ায় ময়লা জমে।
  • ১ দিন চুল শ্যাম্পু না করলে তেল তেল ভাব হয়।
  • মাথা চুলকায়।
  • চুলের গোড়ায় ছোট ছোট গোটা এবং ব্যথা হয়।
  • সাদা আদা খুশকির গুড়া দেখা যায়।
  • চুলের আগা দ্বিখন্তিত হয়ে যায়।
  • চুলে রম্নস্ন ভাব থাকে।
  • চুল লালচে হয়ে যাচ্ছে।
  • চুলের গোড়ায় ব্যথা হয়।
এধরনের সমস্যার কারণগুলো হচ্ছে-
  • চুল ঠিকমত পরিস্কার না রাখা।
  • ছত্রাকের আক্রমন টিনিয়া কেপিটিস
  • অগমিনেট ফলিকুলাইটিস
  • খুশকির আক্রমন
  • ডিটামিনের অভাব
  • রক্ত স্বল্পতা
  • চুলের সঠিক যত্ন না হওয়া
  • নানা রকম কেমিকেলের ব্যবহার
  • হরমোনের তারতম্য
  • সেবোরিক ডার্ম টাইটিস
  • এন্ড্রোজেনিক এলোপিমিয়া বা বংশগত
চুলের সঠিক যত্ন ও পুষ্টির অভাবে চুল পড়ে যায়। খুব সাধারণ নিয়মে চুলের কিছু যত্ন করলে চুল ভালো থাকে। ১ দিন অন্তর চুল পরিস্কার করা প্রয়োজন। ভেজা চুল আচড়ানো ঠিক নয়। অতিরিক্ত আচড়ানোও ঠিক নয়। খাদ্যভাস এখানে একটি বড় ব্যাপার ফল, শাক সবজি, ডিম, দুধ নিয়মিত খাওয়া প্রয়োজন।

চুল প্রোটিন দিয়ে তৈরী। তাই খাদ্যতালিকায় প্রোটিন রাখা প্রয়োজন। ওজন কমানোর জন্য ডায়েটিং করার সময়ও এ ব্যাপারে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। প্রয়োজনীয় ক্যালমিয়াম, আয়রন ও অন্যান্য ভিটামিন খাওয়া হচ্ছে কিনা লক্ষ্য রাখুন। কিছু ঔষুধ দীর্ঘদিন সেবনের ফলেও চুল ঝরতে পারে। যেমন গাউট কিংবা আর্থারাইটিসের ঔষধ মানসিক অবসাদের ঔষধ, এছাড়া ক্যান্সার কেমোসেরাপি। ঝরে পড়া স্বাভাবিক। কিন্ত্ত এর থেকে বেশি মনে হলে সর্তক হন। বর্তমানে চুল পড়ার আধুনিক চিকিৎসা আছে। কম বয়সে চুল পড়লে অবশ্যই চিকিৎসা প্রয়োজন কারনে এতে চুল ঝরা অন্তত বন্ধ হবে। মনে রাখতে হবে চুল ঝরা বন্ধ হলে আপনার মাথায় ঠাক পড়বে না। আর নতুন চুল গজানোর জন্যও একটু ঔষধ ব্যবহার করা হচ্ছে। কিনাষ্টেররেও নামের উষধ ব্যবহার করে ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করতে হয়। চুল ঝড়তে শুরম্ন করলে অবহেলা না করে সঠিক চিকিৎসা যত্ন নিন।

ডা. ওয়ানাইজা
চেম্বার : জেনারেল মেডিক্যাল হাসপাতাল (প্রা.) লি. ১০৩, এলিফ্যান্ট রোড (তৃতীয় তলা), বাটা সিগন্যালের পশ্চিম দিকে, ঢাকা। মোবাইল : ০১৯১১৫৬৬৮৪২।


সূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক, আগস্ট-২০০৯

পাকস্থলীর ক্যান্সার

যে সব ক্যান্সারের কারণে মানুষ মারা যায় তন্মধ্যে পাকস্থলীর ক্যান্সার অন্যতম। তবে আশার কথা হল এই যে- এ রোগটি প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয় করা গেলে এবং অপারেশনের মাধ্যমে ক্যান্সারের আক্রান্ত স্থান ফেলে দিলে রোগী সম্পূর্ণ রূপে ভাল থাকতে পারেন।

প্রাথমিক অবস্থায় হজম ক্রিয়ার গোলযোগ বা সচরাচর খাদ্য গ্রহণের পাকাশয়ের প্রান্তভাগে অস্বস্তি অনুভুতি বা Dyspepsia ছাড়া তেমন কোনো উপসর্গ দেখা যায় না। এর ফলে রোগী তেমন কোনো গুরুত্ব দেন না, অনেকে মনে করেন গ্যাষ্ট্রিক হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ খেয়ে অনেকে সাময়িক আরাম অনুভব করেন। ফলে ক্যান্সার পাকস্থলী থেকে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পায়। রোগটি ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ দেখা যায়-

  • অল্প খেলেই তৃপ্তি চলে আসে;
  • পেট ফেপে থাকে;
  • পেট ফুলে যায়;
  • বমি হয়;
  • রক্ত শূণ্যতা দেখা যায়;
  • খাদ্য গ্রহনে অন্ননালীতে ব্যথা অনুভব হয়;
  • শরীরের ওজন কমে যায়;
  • বমির সাথে রক্ত যায় কিংবা কালো পায়খানা হতে পারে।
যে ক্ষেত্রে অপারেশন করিয়েও রোগীর আয়ুষ্কাল খুব বেশী বাড়ানো যায় না। এ রোগটি সাধারণত চল্লিশোর্ধ বয়সেই বেশী হয়ে থাকে। নারীদের চেয়ে পুরম্নষেরা এ রোগে বেশী আক্রান্ত হন। যে সমস্ত কারণে পাকস্থলীতে ক্যান্সার হয় তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-
  • হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি নামক এক প্রকার জীবাণুর আক্রমন;
  • প্রচুর পরিমানে মদ্যপান;
  • যে সমস্ত খাবারে অত্যাধিক লবণ রয়েছে যেমনঃ কিছু কিছু সামুদ্রিক মাছ, দীর্ঘ দিন যাবৎ সংরক্ষিত টিনজাত খাবার;
  • যে সমস্ত খাবারে N-nitrous compounds রয়েছে কিংবা এন্টি অক্সিডেন্ট এর অভাব রয়েছে।
ধুমপায়ী লোক এবং যে পরিবেশে ডাস্ট বা ধূলাবালী বেশী সেখানে বসবাসকারীদের মধ্যে এ রোগ হতে পারে। কেউ কেউ মনে করে বংশগত কারণেও পাকস্থলীর ক্যান্সার হতে পারে।

পূর্বে জাপানে পাকস্থলী ক্যান্সারের কারণে বহুলোক মারা যেত। কিন্তু বর্তমানে চলিশোর্ধ বয়সের যে লোক হজম ক্রিয়ার গোলযোগে আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের ক্ষেত্রে এন্ডোস্কোপি করে প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয় করে ক্যান্সার অপারেশনের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয় এবং রোগী বাকী জীবন যাপন করতে পারেন।

কিন্তু আমাদের দেশে রোগীরা যখন ডাক্তারের শরনাপন্ন হন- তখন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ক্যান্সার পাকস্থলীর বাইরে ছড়িয়ে পরে। প্রাথমিক অবস্থায় পাকস্থলীর ক্যান্সার নির্ণয় করা গেলে অপারেশনের মাধ্যমে এ রোগ থেকে সম্পূর্ণ নিরাময় হওয়া যায়।

অধ্যাপক ডা. একেএম ফজলুল হক
বৃহদন্ত্র ও পায়ূপথ বিশেষজ্ঞ

চেম্বারঃ জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশীপ হাসপাতাল, ৫৫, সাত মসজিদ রোড, ধানমণ্ডি, ঢাকা। ফোনঃ ০১৭১৫-০৮৭৬৬১, ০১৭২৬-৭০৩১১৬।

দৈনিক ইত্তেফাক- আগস্ট, ২০০৯

হৃদরোগীদের খাবার দাবার

সুপার-পোষক সমূহ বর্তমানে মেডিক্যাল আর বৈজ্ঞানিক রিসার্চের মনোযোগ আকৃষ্ট করেছে। এগুলো হচ্ছে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি আর ভিটামিন-ই-র অগ্রদূত। এই সব পোষক এক সাথে মিলে এমন শক্তিশালী জোট তৈরী করে, যেটা শরীরকে বেশ কিছু রোগের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে আর বয়স বাড়ার ক্রিয়াকেও কম করতে পারে।

এই সব ভিটামিন বেশ কয়েক ধরনের খাদ্য পদার্থে পাওয়া যায় আর প্রাকৃতিক রূপে ফল আর সব্জীর মধ্যে পাওয়া যায়, যেগুলো আমরা বেশী পরিমাণে খেতে পারিঃ বিশেষ করে যখন সেগুলোর মরশুম থাকে। অন্য দিকে ওষুধ খেলে তার সাইড এফেক্টস হতে পারে আর প্রাকৃতিক পোষকগুলোর সঙ্গে এর কোন মিলই নেই। আসলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংগঠন আর অন্য খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রাণালয়গুলোর সমর্থনে এই দিকে যথেষ্ট অনুসন্ধান চালানো হয়েছে।

বিটা-ক্যারোটিন, ভিটামিন-সি আর ভিটামিন-ই-র অদ্ভুত শক্তির ব্যাপারে প্রচুর অধ্যয়ন করা হয়েছে। স্বাধীন ভাবে ভিটামিন-এ ভিটামিন-সি, ভিটামিন-ই সেবন করা ব্যক্তিদের মধ্যে ক্যান্সার, এ্যাঞ্জাইনা আর হৃদয় রোগ কম দেখতে পাওয়া যায় আর তাদের আয়ুও লম্বা হয়।

শরীরকে চালানোর জন্য ভোজন থেকে প্রাপ্ত অক্সিজেনের সঞ্চার হিমোগ্লোবিনের লাল রং-য়ের কণাগুলো দ্বারা হয়, যাতে লৌহ থাকে। রক্ত-প্রবাহে অক্সিজেন কোশিকাগুলোকে জীবিত রাখার জন্য গ্রহণ করা হয়। এই ক্রিয়াকে অক্সিডেশন বলা হয়। যদিও এই অক্সিজেন মুক্ত কণার নির্মাণও করে, যেটা অধিক পরিমাণে হয়ে পড়লে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

মুক্ত কণা অক্সিডেশনের ক্রিয়ার সময় সৃষ্টি হয়। যখন শরীর অক্সিজেনের ব্যবহার করে, তখন সেটা এনার্জি তৈরী করার জন্য ভোজনকে বিঘটিত করে। এটা কীটানু, ওজোন আর কর্বন মোনো-অক্সাইডের মত বিষাক্ত তত্ত্বগুলোকেও নষ্ট করে দেয়। এই প্রক্রিয়ায় মুক্ত কণাও সৃষ্টি হয় এই সব কণা কোশিকাগুলোর ঝিল্লীকে নষ্ট করে দেয় আর ক্রোমোসোন্স এবং জৈবীয় সামগ্রীগুলোর ক্ষতিসাধন করে। এটা মুল্যবান এঞ্জাইমগুলোকেও নষ্ট করে ফেলে, যার কারণে পুরো শরীরে নষ্ট হয়ে পড়ার এক প্রতিক্রিয়া শুরম্ন হয়ে পরে। এই ভাবে মুক্ত কণা করোনারী হৃদয় রোগ, ফসফুসের রোগ, কয়েক ধরনের ক্যান্সার, চোখের ছানি, আর্থারাইটিস, পার্কংসন্স রোগ আর বার্ধক্যের মত কমপক্ষে ৫০ শতাংশ রোগের এক বড় কারণ হয়ে ওঠে।

মুক্ত কণা থেকে হওয়া ক্ষতিকে আমরা দু ভাবে কম করতে পারি। প্রথম, আমাদের এমন তত্ত্ব আর গতিবিধির হাত থেকে বাচতে হবে, যেগুলো মুক্ত কণা সৃষ্টি হতে সহায়তা করে, যেমন-সিগারেট, প্রদুষণ আর সুর্যের আল্ট্রাভায়োলেট কিরণ।

দ্বিতীয়তঃ এটা সুনিশ্চিত করতে হবে যে, আমরা নিজেদের দৈনিক আহারে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি আর মিটামিন-ই সেবন করে, বেশী মাত্রায় এ্যান্টী-অক্সিডেন্ট গ্রহণ করব।

যদিও ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি আর ভিটামিন-ই মুক্ত কণা থেকে হওয়া ক্ষতির সঙ্গে লড়তে সহায়তা করে, বায়ু প্রদুষনও এই সব গুরম্নত্বপূর্ণ পোষকগুলোর সাপ্লাইকে কম করে তোলে। অধ্যয়ন থেকে এটা জানতে পারা গেছে যে, শহরে বাস করা ব্যক্তিদের মধ্যে, যারা প্রদুষিত হাওয়ায় শ্বাস নেন, এ্যান্টি-অক্সিডেন্টের স্তর কম থাকে। এর ফলে শরীরে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি আর ভিটামিন-ই-র আপুর্তি বিপজ্জনক ভাবে কমে আসে। এমনটা হলে এগুলোর জায়গা মুক্ত কনা নিয়ে আর অক্সিডেটিভ চাপয়ের সৃষ্টি হয়ে পড়ে। আমাদের ভোজনে মুক্ত কণা থাকাটা আমাদের পক্ষে বিপজ্জনক হয়। এর মুখ্য উৎস হচ্ছে ফ্যাট (যেমন বেশী তাপমাত্রায় গরম করা রান্না করার তেল) ফ্যাটকে যে মুহুর্তে গরম করা হয়, তার রাসায়নিক রচনা ভেঙে বিপজ্জনক হাইড্রোক্সিল কণা তৈরী করে। কোশিকাগুলোর আর ডিএনএয়ের প্রচণ্ড ক্ষতি করে। (সুর্যমুখীর তেলের মত পোলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশী তাপমাত্রায় কম স্থায়ী থাকে। এটা জৈতুনের তেলের মত মোনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট-য়ের তুলনায় দ্রম্নত অক্সিডেটেড হয়ে পড়ে।) মেডিক্যাল সায়েন্স সর্বদা ভিটামিনের লাভের প্রচার করে এসেছে আর বৈজ্ঞানিকেরাও এই জাদু তত্ত্বের সার্থকতা প্রমানিত করার জন্য কঠোর প্ররিশ্রম করেছেন। এ্যান্টী-অক্সিডেন্টসের বিচার সম্বন্ধিত রূপে কিছুটা নতুন।

এ্যান্টী-অক্সিডেন্টস প্যাথোলোজিক্যাল পরিস্থিতি গুলোয় চিকিৎসায় নতুন পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছে যেমনঃ

০ কার্ডিয়োভাস্কুলার রোগ- সিএইচডি, উচ্চ রক্তচাপ।

০ সেরিব্রোভাস্কুলার রোগ।

০ মেটাবোলিজম রোগ-ডায়াবেটিজ মেলিটাস।

০ শিরার রোগ- এলে&জমিট রোগ, মৃগী।

০ বিপোষক রোগ- চোখের ছানি, আর্থারাইটিস, বার্ধযক্য।

০ ক্যান্সার।

ভিটামিন-এ

ভিটামিন-এ দু প্রকারের হয়। প্রথম, পশুদের থেকে প্রাপ্ত উৎপাদন, যেমন মাংস আর দুধে পাওয়া যায়। একে রেটিনল বলা হয়; এবং দ্বিতীয় ফল আর সব্জীতে পাওয়া যায়, যাকে- ক্যারেটিন’ বলা হয়। বিটা-ক্যারেটিনই এ্যান্টী- অক্সিডেন্টের রূপে কাজ করে।

শরীরের বিকাশ আর তন্ত্রগুলোকে সুস্থ রাখার জন্য ভিটামিন-‘এ’-র প্রয়োজন হয়। এর অভাব হয়ে পড়লে ত্বক আর চোখ অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে আর সুস্থ হাড় আর ভালো দাঁত তৈরী হতে সমস্যা দেখা দিতে পারে। যদি এর অভাবের চিকিৎসা সময় থাকতে না করানো হয়, তাহলে ব্যক্তি পুরোপুরি অন্ধ ও হয়ে পড়তে পারেন। ভারতে অন্ধত্বের কারণগুলোর মধ্যে সব থেকে সাধারণ কারণ হচ্ছে ভিটামিন- ‘এ’-র অভাব। বিটা- ক্যারোটিন বেশ কিছু ফল আর সব্জীতে পাওয়া যায়, যেমন- পালং শাক, ধনেপাতা, বাঁধাকপি, গাজর, আম, টমাটো ইত্যাদি। শরীরে এই ক্যারোটিন, ভিটামিন- ‘এ’তে পরিবর্তিত হয়ে পড়ে। বিটা- ক্যারোটিন রান্না করলে বা আল্ট্রা-ভায়োলেট কিরণের ফলে নষ্ট হয় না।

একজন বয়স্ক ব্যক্তির প্রতি দিন ৬০০ মিলি গ্রাম রেটিনল বা ২৪ মিলিগ্রাম বিটা-ক্যারোটিন-য়ের প্রয়োজন হয়। বাড়ন্ত বাচ্চা, গর্ভবতী মহিলা আর অসুস্থ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই প্রয়োজনটা আরও বেশী হয়। ১ মিলিগ্রাম বিটা-ক্যারোটিন= ০.২৫ মিলিগ্রাম রেটিনল।

বিটা-ক্যারোটিন দু ভাবে কাজ করে। প্রথমে এর কিছু অংশ ভিটামিন-এ তে পরিবর্তিত হয় আর অবশিষ্ট বিটা-ক্যারটিন এ্যান্টী-অক্সিডেন্টের রƒপে কাজ করে। এটা অত্যন্ত গুরম্নত্বপূর্ণ যে, বিটা-ক্যারোটিন আর ভিটামিন-এ-র মধ্যে যেন ভ্রমের সৃষ্টি না হয়ে পড়ে, কারন এই দুটো হচ্ছে আলাদা- আলাদা তত্ত্ব। আমাদের শরীর বিটা-ক্যারোটিনকে ভিটামিন-এ-তে পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়।

যদিও, দীর্ঘ সময় ধরে বেশী পরিমাণে ভিটামিন-এ সেবন করাটা ক্ষতিকারক লক্ষন সৃষ্টি করতে পারে, যেমন- মাথা যন্ত্রণা, গা গোলানো, বমি, আলস্য, শুষ্ক ত্বক, ঠোঁট ফাটা ইত্যাদি।

ভিটামিন-এ-র প্রয়োজন শরীরের বিকাশ আর তার তন্ত্তগুলোকে সুস্থ রাখার জন্য হয়। এর গুরম্নত্বপূর্ন ভূমিকাগুলোর মধ্যে একটা হচ্ছে আমাদের কোশিকাগুলোকে স্বরক্ষাত্মক কবচ বা ঝিল্লি প্রদান করা। এটা মিউকাস ঝিল্লি-কেও সুরক্ষিত রাখে। এটা ফ্যাটে গুলো যায়। মাছের লিভারের তেল হচ্ছে ভিটামিন-এ-র সব থেকে ভালো প্রাকৃতিক উৎস।

বিটা-ক্যারোটিন হচ্ছে গাছের মধ্যে পাওয়া এক প্রাকৃতিক পদার্থ আর সবার আগে এটাকে গাজরের মধ্যে খুজে পাওয়া গেছিল.. এজন্য পুরো পরিবারকে ক্যারোটেনয়েডস& নাম প্রদান করা হয়েছিল। ক্রারোটেনয়েডস& নাম প্রদান করা হয়েছিল। ক্রারোটেনয়েডস& বেশ কিছু রঙ্গীন পদার্থ রয়েছে, যেগুলো প্রকৃতিতে দেখতে পাওয়া বেশ কিছু রং-য়ের ভাণ্ডার। বিটা-ক্যারোটিন গাঢ় লাল-কমলা রং-য়ের হয় এবং হলুদ আর কমলা গাঢ় সবুজ রংয়ের সব্জীতেও ক্যারোটিন থাকে, কিন্ত্ত ক্লোরোফিলের কারণে হলুদ আর কমলা রং চাপা পড়ে যায়.. কিন্ত্ত অনেকবার এটা বেশী চাপা পড়তে পারে না .. যেমন লাউতে।

বিটা-ক্যারোটিন হচ্ছে সব থেকে শক্তিশালী এ্যান্টী-অক্সিডেন্টসগুলোর অন্যতম, যেটা গাছকে সূর্যের আল্টা-ভায়োলেট কিরণে পুড়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। এটা হচ্ছে প্রকৃতির সঠিক রক্ষক। তরমুজ, বেদানা, আডু, আম আর গাজর, আলু, পালং শাক, টমাটো, আজওয়াইন, জলকুম্ভী আর ফুলকপির মত ফল আর সব্জীতে বিটা-ক্যারোটিন থাকে।

ভিটামিন-সি (এস্কোর্বিক এ্যাসিড)

এ্যান্টি- অক্সিডেন্টের রƒপে কাজ করা ছাড়াও ভিটামিন-সি-র আরও বেশ কিছু গুণ রয়েছে। এটা শরীরের বিকাশ আর শরীরের তন্ত্তগুলো, মাড়ি, দাত, রক্তের নাড়ি আর হাড়ে হয়ে পড়া ক্ষতিকে পুরণ করতেও সহায়তা করে। এটা শারীরিক ব্যবস্থায় শামিল থেকে ব্যাক্টেরিয়া আর ভাইরাল সংক্রমণয়ের সঙ্গে লড়তেও সহায়তা করে। ভিটামিন-সি-র অভাবের কারণে হেমারেজ ক্ষতস্থান শুকোতে সময় নেওয়া, স্কার্বি রোগ, মাড়ি থেকে রক্ত পড়া, হাড়ের ধীর গতিতে নির্মান ইত্যাদি লক্ষন দেখতে পাওয়া যায়। ভিটামিন-সি আমলাতে পাওয়া যায়। ভিটামিন-সি-র ভালো উৎস হচ্ছে রসযুক্ত ফল, যেমন- পাতি লেবু, মুসম্বী লেবু, কমলা লেবু, পেয়ারা আর সবুজ পাতাওয়ালা সব্জী, যেমন- পালং শাক ইত্যাদি। কাটা আর রান্না একে নষ্ট করে দেয়। একজন বয়স্ক ব্যক্তির জন্য প্রতিদিন এর প্রয়োজন হচ্ছে ৪০ মিলিগ্রাম। এটা শরীরে জমা হয়ে থাকে না অতিরিক্ত মাত্রা প্রস্রাবের সঙ্গে শরীর থেকে বাইরে বেরিয়ে যায়।

ভিটামিন-ই

ভিটামিন-ই-ও এ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে আর ঝিল্লীর ওপরে জমা হয়ঃ যার কারণে সেটাকে প্যারক্সাইডসয়ের ক্রিয়া থেকে রক্ষা করে। বাঁচায় আর অক্সিজেনের বিষাক্ত প্রভাবকেও আটকায়.. এই প্রকার এটা অক্সিজের মুক্ত কাণাগুলোকে মজবুত করে তুলে শরীরের রোগগুলোর সঙ্গে লড়ার শক্তি প্রদান করে আর হৃদয় রোগ থেকেও সুরক্ষা প্রদান করে।

ভিটামিন-ই গম, অঙ্কুরিত আনাজ, গোটা আনাজ, স্যালাড ইত্যাদিতে পাওয়া যায়। এছাড়া আরও কিছু তত্ত্বও আমাদের শরীরে এ্যান্টি-অক্সিডেন্টের কাজ করে, যেমন- সেলেনিয়াম, মেলিডেনম ইত্যাদি।

০ডা. গোবিন্দ চন্দ্র দাস

সিনিয়র কনসালটেন্ট , শহীদ সোহরাওয়াদী হাসপাতাল, ঢাকা। করোনারী আর্টারী ডিজিস প্রিভেনশান এন্ড রিগ্রেশান সিএডিপিআর সেন্টার, ৫৭/১৫ পশ্চিম পান্থপথ, ঢাকা। ফোনঃ ০১৯২১৮৪৯৬৯৯।

সূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক, আগস্ট-২০০৯

সর্পদংশন বিষয়ে প্রথম জাতীয় জরিপ

৮৬ শতাংশ মানুষ ওঝার কাছে যায়। চিকিৎসকেরকাছে যায় ৩ শতাংশ। আক্রান্ত বরিশালে বেশি, সিলেটে কম। বছরে বিশ্বে আক্রান্ত ৩০ লাখ, মারা যায় দেড় লাখ
বছরে প্রায় ৬ লাখ মানুষ সাপের কামড় খায়, মারা যায় ৬০৪১
শরিফুজ্বামান, প্রথম আলো

সাপে কামড়ানোর পর ৮৬ শতাংশ মানুষ ওঝার কাছে যায়। চিকিৎসকের কাছে যায় মাত্র তিন শতাংশ। বাংলাদেশে সাপের কামড় এবং এর ঝুঁকি নিরূপণ বিষয়ে এক গবেষণায় এ তথ্য পাওয়া গেছে। গবেষকেরা বলছেন, এ বিষয়ে জাতীয় পর্যায়ে এটাই প্রথম জরিপ।
গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশের গ্রামে বছরে প্রতি এক লাখের মধ্যে ৬২৩ জন সাপের কামড়ের শিকার হয়। এই হিসাবে গ্রামে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর মধ্যে পাঁচ লাখ ৮৯ হাজার ৯১৯ জন সাপের কামড়ের শিকার হয়। এদের মধ্যে বছরে মারা যায় ছয় হাজার ৪১ জন। সারা বিশ্বে এই সংখ্যা দেড় লাখেরও বেশি।
গবেষকেরা বলছেন, বাংলাদেশে প্রায় ৮০ প্রজাতির সাপ আছে। এর মধ্যে বিষধর সাপ রয়েছে ২২ প্রজাতির। তাঁরা সাপের কামড়কে বাংলাদেশের প্রাচীন ও অবহেলিত জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করেন। এ সম্পর্কে জাতীয় ধারণা তৈরির জন্য তাঁরা এ ধরনের গবেষণায় সম্পৃক্ত হয়েছেন বলে জানান।
দেশে সরকারি-বেসরকারিভাবে প্রচলিত পুরোনো তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর ৮-১০ হাজার মানুষ সাপের কামড়ের শিকার হয়। এদের মধ্যে মারা যায় হাজার দুয়েক। বাংলাদেশে প্রতি লাখে ৪ দশমিক ৩ জন সাপের কামড়ের শিকার হয় বলে এত দিন তথ্য ছিল।
এই গবেষণার সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিশ্বব্যাংক ও অস্ট্রেলিয়ার নিউ ক্যাসেল ইউনিভার্সিটি। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক রিদওয়ানউর রহমান ও অস্ট্রেলিয়ার নিউ ক্যাসেল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক আবুল হাসনাৎ মিল্টন গবেষণা সম্পন্ন করেছেন। তাঁদের সঙ্গে আরও আছেন নিউ ক্যাসেল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এলিসন জনস ও অধ্যাপক ক্যাথারিন ডেসটি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক এম এ ফয়েজ প্রমুখ।
হাঁটার সময় সাপে কামড়ায় বেশি: গবেষণায় দেখা গেছে, হাঁটার সময় সাপের কামড়ের ঘটনা বেশি ঘটে এবং গ্রামাঞ্চলে মোট আক্রান্তের ২৭ শতাংশ এভাবে চলার পথে দংশিত হয়। এ ছাড়া পানিতেও দংশিত হয় ২৭ শতাংশ মানুষ।
এ প্রসঙ্গে আবুল হাসনাৎ বলেন, গ্রামাঞ্চলে বিশেষ করে রাতের বেলায় হাঁটার সময় সাপে কামড়ানোর ঘটনা বেশি ঘটে। এ ছাড়া ঘুমের মধ্যেও এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে।
বরিশালে বেশি, সিলেটে কম: দেশের ছয়টি বিভাগের মধ্যে বরিশালে সাপে কামড়ানোর ঘটনা বেশি। ওই বিভাগে বছরে প্রতি লাখে দুই হাজার ৬৬৭ জন দংশিত হয়। এই সংখ্যা খুলনা বিভাগে প্রতি লাখে ৯৩৬ জন। নদীবহুল ও উপকূলীয় অঞ্চলে সাপের প্রকোপও বেশি।
চট্টগ্রাম বিভাগে সাপের কামড়ে আক্রান্ত হয় ৩৯৭ জন। পাহাড়ি এলাকা হলেও ওই অঞ্চলে সাপে কামড়ানো এবং মৃত্যুর ঘটনা তুলনামূলক কম পাওয়া গেছে। এর কারণ হিসেবে একজন গবেষক বলেছেন, সাপের উপদ্রব সম্পর্কে ওই এলাকার মানুষ বেশি সচেতন এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ বিষয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। তা ছাড়া পাহাড়ি এলাকায় ওঝাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ফৌজদারহাটে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস প্রতিষ্ঠার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে এবং সেখানে সাপে কামড়ানোসহ এ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকবে। রাজশাহী বিভাগে প্রতি লাখে ৪৭২ জন এবং ঢাকা বিভাগে প্রতি লাখে ৪৪০ জন সাপের কামড়ে আক্রান্ত হয়।
ওঝাই ভরসা: গবেষণা অনুযায়ী, সাপে কামড়ানোর পর ৬০ শতাংশ মানুষ বা তাদের আত্মীয়স্বজন দোয়া-দরুদ ও মন্ত্র পাঠ করে। ৭৫ শতাংশ দুই ঘণ্টার মধ্যে কোনো না কোনো ধরনের চিকিৎসা নেয়। বিশেষ করে ওঝার কাছে যায়।
এ প্রসঙ্গে রিদওয়ানউর রহমান বলেন, ওঝাদের প্রশিক্ষণ দিলে সাপে কামড়ানো রোগীকে ছয় থেকে ১২ ঘণ্টা টিকিয়ে রাখা যায়। তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে যাওয়ার আগেই সাপে কামড়ানো অর্ধেক রোগী মারা যায়। এ জন্য ওঝাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া গেলে এবং কমিউনিটি হাসপাতালে এর চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকলে সাপের কামড়ে প্রাণহানির ঘটনা কমে আসবে।
সাপে কামড়ালেই মৃত্যু নয়: গবেষণায় বলা হয়েছে, সাপে কামড়ানোর পর ৬০ শতাংশ রোগী মনে করে যে বিষধর সাপই তাদের কামড় দিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সাপে কামড়ানো ৯০ শতাংশের বেশি রোগী বেঁচে যায়।
রিদওয়ানউর রহমান বলেন, অধিকাংশ সাপই বিষধর নয়। বিষধর সাপ কামড়ালেও পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টার মধ্যে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া গেলে রোগী বেঁচে যায়। বিষধর সাপ কামড় দিলে রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়, মরার মতো হয়ে থাকে। কিন্তু মারা যায় কয়েক ঘণ্টা পর। তিনি আরও বলেন, গোখরা, দুমুখো সাপ, গাছে থাকা সাপসহ কয়েকটি প্রজাতির সাপের কামড়ে মৃত্যু ঘটে।
বিশ্বে মারা যায় দেড় লাখ: প্রতিবছর বিশ্বের প্রায় দেড় লাখ মানুষ সাপের কামড়ে মারা যায়। আর সাপ কামড় দেয় প্রায় ৩০ লাখ মানুষকে। আক্রান্ত ও মারা যাওয়া মানুষের প্রায় সবাই দরিদ্র এবং গ্রামের অধিবাসী।
গবেষকেরা বলেছেন, অস্ট্রেলিয়া ও ব্রাজিলের মতো উন্নত কিছু দেশে সাপের প্রকোপ রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত ও নেপালে সাপের প্রকোপ বেশি। তবে নেপালের গ্রামীণ জীবনের সঙ্গে বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবনের সাদৃশ্য রয়েছে। নেপালে প্রতি লাখে সাপের কামড়ের শিকার হয় এক হাজার ১৩০ জন।
অধ্যাপক এম এ ফয়েজ বলেন, সাপের কামড় হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অবহেলিত স্বাস্থ্য সমস্যা। এটা মূলত গ্রামের দরিদ্র মানুষের সমস্যা। এর চিকিৎসা, ওষুধ, প্রশিক্ষণ, প্রতিকারসহ বিভিন্ন উদ্যোগ যথেষ্ট নয় বলে তিনি মনে করেন।
রিদওয়ানউর রহমান বলেন, সারা বিশ্বে এমনকি বাংলাদেশে সাপের কামড় সম্পর্কে যে পরিসংখ্যান রয়েছে, তা বাস্তবের তুলনায় অনেক কম। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ধনী দেশ, বিত্তবান বা শহরের মানুষ সাপের কামড়ে সাধারণত আক্রান্ত হয় না। সংক্রামক রোগ না হওয়ার কারণে সাপে কামড়ানোর বিষয়টি উন্নত বিশ্বের নজরে আসছে না।
আবুল হাসনাৎ বলেন, পৃথিবীতে বিষক্রিয়াসংক্রান্ত সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটে সাপের কামড়ে। কিন্তু বিষয়টি ততটা গুরুত্ব পায় না। বৈজ্ঞানিক উপায়ে ছয়টি বিভাগের গ্রামীণ তিন হাজার ৯৯৩টি পরিবারের ১৮ হাজার ৮৫৭ জনের ওপর জরিপ চালিয়ে এবং গবেষণার মাধ্যমে এ সংক্রান্ত তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করা হয়েছে।

সূত্রঃ প্রথম আলো, আগস্ট-২০০৯

ডায়রিয়া ও আমাশয়ে কাঁচকলা উপকারী

সবুজ কলা, যা সাধারণের কাছে কাঁচকলা নামে পরিচিত, সেই কাঁচকলা ডায়ারিয়া ও রক্ত আমাশায় বা ব্লাড ডিসেন্ট্রিতে উপকারী বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। আমেরিকান গ্যাস্ট্রো অ্যান্ট্রলজি অ্যাসোসিয়েশনের গ্যাস্ট্রো অ্যান্ট্রোলজি জার্নালে প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানিয়েছেন আইসিডিডিআরবির গবেষক, ডা. জিএইচ রব্বানী। ১-২ বছর বয়সের ২০০ শিশুর ওপর পরিচালিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, শতকরা ৭০-৮৫ ভাগ ক্ষেত্রে ২-৪ দিনের মধ্যে ডায়ারিয়া ও রক্ত আমাশয়ে আক্রান্ত শিশুরা সেরে উঠছে। গবেষণায় বলা হয়েছে কাঁচকলায় রয়েছে বিশেষ ধরনের স্টার্চ বা শকরা জাতীয় উপাদান, যা মানুষের হজমযোগ্য নয়। এই উপাদানটি পরিপাকনালী পৌঁছার পর সেখানে অবস্থিত ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা ভেঙে ফ্যাটি এসিডে পরিণত হয়। এ ফ্যাটি অ্যাসিড পরিপাকনালী থেকে লবণ ও পানিকে শোষণ করে ধরে রাখার মাধ্যমে ডায়রিয়া রোধ করে। এ গবেষনার সময় ২৫০ গ্রাম সিদ্ধ করা কাঁচকলার সঙ্গে ১০ গ্রাম চালের গুঁড়া এক সঙ্গে রান্না করে ধকধকে জাউ হিসেবে চামচ দিয়ে শিশুদের খাওয়ানো হয়, যেহেতু চার মাস বয়সের আগে শিশুদের হজমক্ষমতা পূর্ণতা পায় না; তাই এই বয়সের আগে কাঁচকলার এই জাউ খাইয়ে কোনো লাভ হবে না। কিন্ত্ত সব বয়সের ক্ষেত্রে কাঁচকলা ডায়রিয়া কমাতে কতটুকু সাহায্য করবে তা নিয়ে এখনো গবেষণা হয়নি। তা ছাড়া এ গবেষণা ডায়রিয়া আক্রান্ত হাসপাতালে ভর্তি শিশুদের ওপর পরিচালিত হওয়ায় ডায়রিয়ার শুধু কাঁচকলার জাউ খেলেই চলবে কি না, সে সম্পর্কে এখনো কোনো গবেষণা হয়নি। গবেষণায় আরো বলা হয়, যেকোনো জাতের কাঁচকলা দিয়েই এটি তৈরি করা যেতে পারে। তবে পাকা কলায় এই উপকরণ পাওয়া যাবে না। কারণ পেকে যাওয়ার সঙ্গে বিশেষ ধরনের সেই স্টার্চ চিনিতে রূপান্তরিত হয়ে যায়।

সূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক

১৬ বছরের কম বয়সীর জন্য এসপিরিন নিষিদ্ধ

এসপিরিন অতি পরিচিত ও সমাদৃত একটি ওষুধ। শত বছর আগে আবিস্কৃত এ ওষুধটি মাথাব্যথা থেকে শুরম্ন করে হার্টের সমস্যা সব ক্ষেত্রেই ব্যবহার সর্বজনবিদিত। কিন্ত্ত শিশুদের বেলায় এই এসপিরিন ব্যবাহর ঝুঁকিপূর্ণ বলে এতদিন শিশুদের ক্ষেত্রে এসপিরিন ব্যবহার করা হতো না। কিন্ত্ত সাম্প্রতিকালে অস্ট্রেলিয়ার কমিটি অন সেফটি অব মেডিসিন (সিএসএম) এসপিরিন ব্যবহারের বিষয়ে আরো বেশি সতর্কতা অবলম্বনের কথা উল্লেখ করে ১৬ বছরের কম বসয়ীদের ক্ষেত্রে এসপিরিন নিষিদ্ধ করার সুপরিশ করেছে। যদিও ১৩-১৫ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে এসপিরিন ততটা ঝুঁকিপূর্ণ না হলেও শিশুদের বেলায় এসপিরিনের অন্যতম পাশ্র্বপ্রতিক্রিয়া রেইস সিনডোমের কথা বিবেচনায় এনে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

০ ডা. কাজী মাহবুবা আক্তার

সূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক

Thursday, August 6, 2009

উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা

আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী
সহযোগী অধ্যাপক, কার্ডিওলজি
ঢাকা মেডিকেল কলেজ

বিশ্বের প্রায় ১৫০ কোটি মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে। সারা বিশ্বে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ (ব্রেইন স্ট্রোক), হূদরোগ ও কিডনি রোগের এককভাবে সবচেয়ে বড় কারণ হলো উচ্চ রক্তচাপ। কাজেই এর চিকিৎসায় জনসচেতনতা সৃষ্টি এক বিশাল জনগোষ্ঠীর উপকারে আসবে। যেহেতু উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা প্রায়ই সারা জীবনের চিকিৎসা, কাজেই রোগীদের তাদের নিজেদের রোগ সম্পর্কে কিছুটা কার্যকর জ্ঞান রাখা প্রয়োজন।

একজন চিকিৎসক উচ্চ রক্তচাপের রোগীর চিকিৎসা করার সময় তিনটি দিকে নজর দেন। প্রথমত, রোগী সত্যি উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে কি না এবং ভুগে থাকলে সেটি কোন পর্যায়ের উচ্চ রক্তচাপ; দ্বিতীয়ত, উচ্চ রক্তচাপের কারণে তার শরীরের কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হলো কি না; তৃতীয়ত, উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে তার হূদরোগের আর কোনো ঝঁুকি আছে কি না।
টারগেট ওরগান ড্যামেজ বা টিওডি বলতে বোঝায় উচ্চ রক্তচাপ দেহের যেসব প্রধান অঙ্গের ক্ষতিকর পরিবর্তন আনে সেগুলোকে। এর মধ্যে আছে হূৎপিণ্ডে দেয়াল পুরু বা মোটা হয়ে যাওয়া এবং হার্ট ফেইলিওর হওয়া, কিডনি ড্যামেজের জন্য রক্তের ক্রিয়েটিনিন সামান্য বেড়ে যাওয়া (১.৩-১.৫ মিলি গ্রাম %) বা প্রস্রাবে সামান্য প্রোটিন যাওয়া, চোখের রেটিনায় অতিরিক্ত রক্তচাপের জন্য রক্তনালির পরিবর্তন বা রক্তপাত, আর রক্তবাহী ধমনির দেয়ালে অ্যাথেরোসক্লেরোটিক প্লাক (চর্বির চর) জমে ধমনির দেয়াল মোটা হয়ে যাওয়া (বিশেষত ক্যারোটিড ধমনিতে, যেটি মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ করে)। পূর্ববর্তী হার্টের ব্যথা বা এনজাইনা এবং হার্ট অ্যাটাকের ইতিহাস; পূর্ববর্তী বাইপাস অপারেশন বা এনজিওপ্লাস্টির (রিং বসানো) ইতিহাস কিংবা পূর্ববর্তী ব্রেইন স্ট্রোক থাকলে একটি উচ্চ রক্তচাপের রোগীর ভবিষ্যতে বড় কোনো কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি স্বভাবতই অনেক বেড়ে যায়।

কার্ডিওভাসকুলার রিস্ক বলতে বোঝানো হয় উচ্চ রক্তচাপ ছাড়াও ধূমপান, ওজন বেশি হওয়া, ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল বেশি হওয়া, কিডনির ক্ষতি হওয়া, বয়স (পুরুষদের ক্ষেত্রে ৫৫ বছরের বেশি, মেয়েদের ক্ষেত্রে ৬৫ বছরের বেশি), পারিবারিক হূদরোগের ইতিহাস ও শারীরিক পরিশ্রম কম করা।

একজন উচ্চ রক্তচাপের রোগীর চিকিৎসা করতে গেলে চিকিৎসক দুটি বিশেষ টার্গেটে দৃষ্টি দেবেন। প্রথমত, রক্তচাপকে সুনির্দিষ্ট স্তরে নামিয়ে আনা; দ্বিতীয়ত, তার টিওডি ও কার্ডিওভাসকুলার ঝঁুকিগুলো ভালো করে অনুসন্ধান করে সেগুলো যতদূর সম্ভব নিয়ন্ত্রণে আনা।

কোনো ঝঁুকি (রিস্ক ফ্যাক্টর) বা টিওডি ছাড়া রোগীর রক্তচাপ ১৪০/৯০-এর নিচে আনতে পারলেই চলবে। কিন্তু ডায়াবেটিস বা অন্য কোনো রিস্ক ফ্যাক্টর অথবা টিওডি থাকলে সে ক্ষেত্রে টার্গেট হলো ১৩০/৮০-এর নিচে। যদি কিডনি ড্যামেজ থাকে, তবে টার্গেট প্রেসার হলো ১২৫/৭৫ বা এর নিচে।

এই লক্ষ্য সামনে রেখে চিকিৎসক রোগীর চিকিৎসায় এগোবেন দুটি পদ্ধতিতে। একটি হচ্ছে, রোগীর জীবন যাপন পদ্ধতি বা লাইফ স্টাইল পরিবর্তন করবেন। আরেকটি হলো, প্রয়োজনীয় ওষুধ দেবেন। প্রথমটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সব রোগীর জন্যই প্রযোজ্য। অনেক রোগীর জন্য এবং প্রি-হাইপারটেনশন গ্রুপের রোগীদের জন্য শুধু এটিই যথেষ্ট। খাবারে সোডিয়াম অর্থাৎ লবণ একদম কমিয়ে দেওয়া, পটাশিয়াম বেশি আছে এমন খাবার (যেমন−বিভিন্ন ফল ও সবজি) বেশি খাওয়া, খাদ্য তালিকায় অাঁশযুক্ত খাবার বাড়িয়ে দেওয়া। এগুলো রক্তচাপ কমাতে এবং ভবিষ্যতে উচ্চ রক্তচাপের রোগী না হতে সাহায্য করে। এবারের বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবসের (১৭ মে) স্লোগান ছিল ‘লবণ ও উচ্চ রক্তচাপ: দুটি নীরব ঘাতক। ভালো করে জানুন, দীর্ঘদিন বাঁচুন।’

খাবারের লবণ যদি অর্ধেক কমানো যায়, তবে সারা বিশ্বে বছরে ২৫ লাখ মানুষ ব্রেইন স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক বা ক্রনিক কিডনি রোগ থেকে বেঁচে যেতে পারে।

চর্বিযুক্ত খাদ্যের সরাসরি রক্তচাপের ওপর প্রভাব নেই; তবে ওজন বাড়িয়ে ও রক্তের চর্বি বাড়িয়ে রক্তচাপ বাড়াতে পারে এবং হূদরোগের ঝুঁকিও অনেক বাড়িয়ে দেয়। খাদ্যের প্রোটিন যদি অ্যানিমেল সোর্স থেকে না এসে প্লান্ট সোর্স থেকে আসে (যেমন−ডাল, শাকসবজি ইত্যাদি), তবে তা বেশি উপকারী বটে। গবেষণায় দেখা গেছে, ৫ শতাংশ ওজন বাড়লে রক্তচাপ বাড়ার ঝুঁকি বাড়ে ২০-৩০ শতাংশ। ওজন কমলে তেমনি রক্তচাপও কমে আসে অনেক। ধূমপান বন্ধ করা রক্তচাপ কমার ওপর যতটা না প্রভাব ফেলে, এর চেয়ে অনেক বেশি প্রভাব ফেলে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমানোয়।
একইভাবে অ্যালকোহল গ্রহণে পরিমিতিবোধ রক্তচাপ যেমন কমিয়ে আনে, এরও বেশি কমায় মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি। শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম উপকার করে নানাভাবে। এটি ওজন কমায়, কোলেস্টেরল কমায়, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে এবং রক্তচাপও কমায়। সপ্তাহের অধিকাংশ সময় (সম্ভব হলে সব দিন) ৩০-৪০ মিনিট মাঝারি পরিশ্রমের কাজ বা হাঁটা কিংবা ব্যায়াম করলেই এ উপকারটুকু পাওয়া সম্ভব। কাজেই হাঁটুন, দৌড়ান এবং লিফটে না চড়ে সিঁড়ি ব্যবহার করুন।

মানসিক চাপ, বিশেষ করে কর্মস্থলের মানসিক চাপ রক্তচাপ বাড়ায়। কাজেই মানসিক চাপ এড়াতে নিজের শখের কিছু কাজ করুন। ছুটি নিন, বিশ্রাম নিন, আর সময়মতো ঘুমানোর অভ্যাস করুন।

এ সবকিছুই আপনার রক্তচাপ এবং কার্ডিওভাসকুলার ঝঁুকি কমাতে সাহায্য করবে। ওষুধ দেওয়ার সময় চিকিৎসক রক্তচাপের মাত্রা ও সম্পর্কিত অন্যান্য রোগ বা অসুবিধার বিষয়টি বিবেচনায় নেন। রোগীর কোনো বিশেষ ওষুধে কোনো পাশ্র্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে কি না বা রোগীর আর্থিক ক্ষমতা অনুযায়ী ওই ওষুধগুলো তার সামর্থেযর আওতায় কি না, এগুলোও কিন্তু বিবেচনার বিষয়।

শেষ কথাটি হলো, উচ্চ রক্তচাপের মতো একটি সারা জীবনের রোগের চিকিৎসায় রোগী আর চিকিৎসক দুজনের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই শুধু এনে দিতে পারে সফল ও দীর্ঘস্থায়ী চিকিৎসার সম্ভাবনা। কাজেই চিকিৎসক তাঁর জ্ঞান দিয়ে চিকিৎসার প্ল্যান করে দেবেন, রোগী তাঁর শ্রম, অর্থ ও আন্তরিক প্রচেষ্টা দিয়ে সেই প্ল্যানটি বাস্তবায়ন করবেন। তাহলেই দীর্ঘ ও সুস্থ জীবন যাপনে আমরা অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারব।

সূত্রঃ প্রথম আলো, ২০০৯

লবণের কথা

আখতারুন নাহার আলো
প্রধান পুষ্টি কর্মকর্তা, বারডেম

আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় লবণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য উপাদান। সোডিয়াম ক্লোরাইড হলো সাধারণ লবণ। এটি দেহের জলীয় অংশের সমতা রক্ষা করে। আবার পেশি সংকোচন, দেহের মধ্যস্থিত সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের মধ্যে সমতা রক্ষা করে। তবে অধিক সোডিয়াম শরীর থেকে পটাশিয়াম বিতাড়িত করে। মাংস ও দুধে সোডিয়াম বেশি থাকে এবং তাজা ফল ও সবজিতে পটাশিয়াম বেশি থাকে।

সাগরজলের লবণ বা পাথুরে লবণ−সব ধরনের লবণেই থাকে সোডিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, কপার ও জিংক। সাগরের পানি বাষ্পীভূত হওয়ার পর ৭৫ শতাংশ থাকে সোডিয়াম ক্লোরাইড ও বাকি ২৫ শতাংশ থাকে অন্যান্য খনিজ পদার্থ। লবণের সাহায্যে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণ করা হয়। এটা ভালো খাদ্যসংরক্ষক। অনেক সময় প্রতিষেধক হিসেবেও লবণ কাজ করে থাকে। যেমন−ঠান্ডাজনিত গলাব্যথায় কুসুম গরমপানিতে লবণ দিয়ে গড়গড়া করতে হয়। আবার শরীরে কোনো ব্যথা, চুলকানি ইত্যাদিতে লবণমিশ্রিত পানি ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়।

খাদ্য উপাদানের মধ্যে পর্যাপ্ত সোডিয়াম থাকলেও স্বাদের জন্য রান্নার সময় বাড়তি লবণ ব্যবহার করা হয়। এই লবণ দেহের সর্বত্র পানিবণ্টন, পরিপাক ও বিপাক-কাজে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ক্ষুদ্রান্ত্র থেকে খাদ্যকণা অবশোষণেও এর ভূমিকা রয়েছে। দৈনিক চার থেকে ছয় গ্রাম লবণ আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজন। অথচ প্রতিদিন আমরা যে লবণ গ্রহণ করি, তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি। এই অতিরিক্ত লবণ কিডনির মাধ্যমে পরিত্যক্ত হয়।

যদি লবণ কম খাওয়া হয়, তাহলে কিডনি সোডিয়াম ক্লোরাইডের নিষ্তর্্ণমণ কমিয়ে দিয়ে নির্ধারিত হারটি বজায় রাখে। নিষ্তর্্ণমণের কাজটি করে অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত অ্যালডেস্টেরম নামের হরমোন। এই হরমোন ক্ষরণ কমে গেলে প্রস্রাবের মাধ্যমে সোডিয়াম নিষ্তর্্ণমণ বৃদ্ধি পায়। আবার হরমোনের আধিক্য ঘটলে দেহে সোডিয়াম জমে গিয়ে শরীর ফুলে যায়। নেফ্রাইটিস ও হূৎপিণ্ডের অসুখে কার্ডিয়াক ফেইলিওর হলে এভাবে সোডিয়াম জমে গিয়ে শরীরে পানি জমে যায়। প্রস্রাব ছাড়াও ঘাম ও মলের সঙ্গে সোডিয়াম বেরিয়ে যায়। এ কারণে প্রচণ্ড গরমে ঘাম হলে লবণ ও পানি খেতে বলা হয়। আবার ডায়রিয়ায় শরীর থেকে পানি বেরিয়ে যায় বলে লবণ ও পানি পান করলে শরীরে লবণের হার বজায় থাকে। জ্বরের সময় পানির সঙ্গে লবণ মিশিয়ে খেলে ভালো হয়। লবণ যেমন শরীরের জন্য প্রয়োজন, তেমনি এই লবণই মানুষের জন্য প্রাণঘাতী হিসেবে কাজ করে।

এ কারণে বিভিন্ন রোগে লবণ নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। যেমন−নেফ্রাইটিস, নেফ্রোসিস, কিডনির অসুখ, হার্টের অসুখ, লিভার সিরোসিস, উচ্চ রক্তচাপ। এসব ক্ষেত্রে মাংস, ডিম, দুধ, গাজর, শিম যতটা সম্ভব কম খাওয়া উচিত। এগুলোতে সোডিয়াম বেশি থাকে।

রোগের তীব্রতার ওপরই লবণ গ্রহণের মাত্রা নির্ধারিত হয়ে থাকে। তবে সব রোগের ক্ষেত্রেই পাতে আলগা লবণ বর্জন করতে বলা হয়। দৈনিক খাদ্যতালিকায় ৫০০-৭৩০ মিলিগ্রাম লবণ থাকা মানে সামান্য নিয়ন্ত্রণ। আর যদি ২০০ মিলিগ্রাম লবণ খেতে বলা হয়, তাহলে সেটা খুবই কড়াকড়ি। এ ক্ষেত্রে নির্ভর করতে হবে যেসব খাবারে লবণ আছে সেসব খাবারের ওপর। কম সোডিয়ামযুক্ত খাবার খেলে উচ্চ রক্তচাপ, ইডিমা বা শোথ, প্রোটিন ইউরিয়া এবং চোখে লাল-নীল দেখা প্রতিরোধ করা যায়। অনেকে মনে করেন, খাবারে লবণ কমালে বুঝি ওজন কমে যাবে। আসলে তা নয়। ওজন বেশি থাকলে উচ্চ রক্তচাপ ও হূদরোগের আশঙ্কার কথা ভেবেই লবণ বাদ দিতে বলা হয়।

সূত্রঃ প্রথম আলো, ২০০৯

শিশুর জন্য ভিটামিন ‘এ’

তাহমীনা বেগম
অধ্যাপক, শিশু বিভাগ
ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ ও বারডেম

ভিটামিন সম্পর্কে একেকজনের ধারণা একেক রকম। ভিটামিনের অপর নাম হলো খাদ্যপ্রাণ, অর্থাৎ ভিটামিন হচ্ছে এমন একটি পদার্থ, যা আমাদের শরীরের জন্য এবং বেঁচে থাকার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ভিটামিনগুলো হচ্ছে−‘এ’, ‘বি’, ‘ই’, ‘কে’ এবং ‘বি’ কমপ্লেক্স। বিভিন্ন ভিটামিন শরীরের বিভিন্ন কাজে লাগে। শিশু, কিশোর ও বয়স্ক সব মানুষের খাদ্যকে সুষম করতে গেলে এর মধ্যে অবশ্যই ভিটামিন থাকতে হবে। শরীরের বিপাকক্রিয়ার চাহিদা পূরণের জন্য বাইরে থেকে খাদ্য হিসেবে বা আলাদাভাবে ভিটামিন সরবরাহ করতে হয়। যেমন−ভিটামিন ‘এ’ আমাদের দৃষ্টিশক্তির জন্য, এই সুন্দর পৃথিবীকে দেখার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এ ছাড়া এই ভিটামিন আমাদের চামড়া, খাদ্যনালি ও শ্বাসনালির আবরণ সুস্থ রাখে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

সবুজ ও রঙিন শাকসবজি, রঙিন ফলমূল, ছোট মাছ, ডিম, মাছের তেল, দুধ ও দুধ থেকে তৈরি করা খাবার, যেমন−পনির, মাখন, ঘি ইত্যাদিতে ভিটামিন ‘এ’ পাওয়া যায়।

আমরা সবাই জানি, ভিটামিন ‘এ’র অভাবে রাতকানা রোগ হয়, অর্থাৎ শিশু রাতের বেলা চোখে দেখতে পারে না। রাতকানা রোগ একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ের একটি সমস্যা, কিন্তু সময়মতো এর চিকিৎসা না হলে চোখের সামনের পর্দা শুকিয়ে যায়, চোখের কর্নিয়ায় ঘা হয়ে যায়, পরে চোখ অন্ধ হয়ে যায়।

রাতকানা, অন্ধত্ব ছাড়াও ভিটামিন ‘এ’র অভাবে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে শিশু ঘন ঘন নিউমোনিয়া, ডায়রিয়ার মতো মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয় এবং মৃত্যুবরণ করে। এ ছাড়া শিশুর বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং ত্বক খসখসে হয়ে যায়।
আপনারা জেনে অবাক হবেন যে এই সবুজ-শ্যামল বাংলাদেশে প্রতিবছর ৩০ হাজার শিশু ভিটামিন ‘এ’র অভাবে অন্ধ হয়ে যায়!
আমাদের দেশে সবুজ শাকসবজির অভাব নেই। এর পরও শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে শুধু মা, বাবা ও অভিভাবকের সচেতনতার অভাবে। তাঁরা অনেকেই জানেন না কোন খাবারে কোন ভিটামিন থাকে। আবার অনেকে জানলেও, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও তেমন গুরুত্ব দেন না। শহরের শিক্ষিত পরিবারের শিশুরাও শাকসবজি খেতে চায় না। ভিটামিন ‘এ’র অভাবে অন্ধত্ব প্রতিরোধ করার জন্য সরকারি পর্যায়ে কিছু কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। প্রথমত, শিশুর বয়স নয় মাস হলে হামের টিকার সঙ্গে একটি ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল (এক লাখ ইউনিট) খাওয়ানো হয়। দ্বিতীয়ত, এক থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের ছয় মাস পর পর একটি ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল (দুই লাখ ইউনিট) দেওয়া হয়। ছয় মাস পরপর যে কর্মসূচি নেওয়া হয়, সেখানে এক বছর বয়সের নিচের শিশুদের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানোর কোনো নিয়ম নেই। শুধু যদি শিশু হাম বা দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয় বা অপুষ্টিতে ভোগে, তাহলেই ভিটামিন ‘এ’ দেওয়ার নির্দেশ আছে।

অনেক সময় দেখা যায়, স্বাস্থ্যকর্মী বা যাঁদের ভিটামিন ‘এ’ খাওয়ানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাঁরা বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে বাড়ির সব শিশুকে ‘এ’ ক্যাপসুল খাইয়ে দেন। তাঁদের অনেকেই জানেন না বা তাঁদের হয়তো সেভাবে নির্দেশ দেওয়া হয় না যে এক বছর বয়সের কম বসয়ী শিশুদের ভিটামিন ‘এ’ দিতে হয় না।

সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি এ ব্যাপারে সচেতন হওয়ার অনুরোধ থাকল।

মায়েরাও খেয়াল রাখবেন, যাতে এক বছরের নিচের শিশুদের ‘এ’ ক্যাপসুল না দেওয়া হয়। ভিটামিন ‘এ’ বেশি মাত্রায় খাওয়ালে বা ছোট শিশুদের খাওয়ালে তাদের মধ্যে কিছু পাশ্র্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমন−বমি বমি ভাব, ঘুম ঘুম ভাব, মাথার তালু ফুলে খাওয়া, চোখের রেটিনা ফুলে গিয়ে দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, যা সাময়িক অন্ধত্ব। সুতরাং ভিটামিন ‘এ’ নিয়ে মনে রাখবেন−

  • অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি ভিটামিন ‘এ’ আছে এমন খাবার আপনার শিশুকে খেতে দিন।
  • আপনার শিশুর বয়স এক থেকে পাঁচ বছর হলে তবেই ছয় মাস পর পর ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ান।
সূত্রঃ প্রথম আলো, ২০০৯

গর্ভাবস্থায় মায়েদের আলট্রাসনোগ্রাফি

মো. তারিকুল ইসলাম
রেডিওলজি ও ইমেজিং বিশেষজ্ঞ
এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট

গর্ভাবস্থায় এক বিশেষ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মায়ের গর্ভে ভ্রূণ বেড়ে ওঠে। আর গর্ভস্থ শিশুর বেড়ে ওঠা, তার চারপাশের অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য আলট্রাসনোগ্রাফি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পরীক্ষা। পরীক্ষাটি নিরাপদ, এতে কোনো পাশ্র্বপ্রতিক্রিয়া নেই, সহজলভ্য এবং এটি বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়।

সাধারণত যেসব কারণে আলট্রাসনোগ্রাফি করতে হয়
গর্ভধারণ হয়েছে কি না তা নিশ্চিত করা হয় আলট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে। পূর্ববর্তী মাসিকের সাড়ে চার সপ্তাহের মধ্যে গর্ভাশয়ের থলে এবং পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভাশয়ের থলের মধ্যে আরেকটি ক্ষুদ্র থলে (ইয়ক স্যাক) দেখে শনাক্ত করা যায় গর্ভধারণ হয়েছে কি না। আর সাড়ে পাঁচ সপ্তাহ পর ভ্রূণ দেখা যায়।

হূৎপিণ্ডের চলাচল পর্যবেক্ষণ
গর্ভধারণ করার পর ছয় সপ্তাহের মধ্যে পালস ডপলার সনোগ্রাফির মাধ্যমে ভ্রূণের হূৎপিণ্ডের চলাচল বোঝা যায় এবং সাত সপ্তাহের মধ্যে সাধারণ গ্রে-স্কেল আলট্রাসনোগ্রাফি যন্ত্রেও (যার মাধ্যমে শরীরের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অঙ্গ ও টিস্যু দেখা হয়) ধরা যায়। আবার সাত মিলিমিটার উচ্চতার ভ্রূণের হূৎপিণ্ডের চলাচল বুঝতে না পারলে ভ্রূণের মধ্যে প্রাণ নেই বলে সন্দেহ করতে হবে। তবে অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে এর সাত থেকে ১০ দিন পর পুনরায় আলট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে ভ্রূণের হূৎস্পন্দন আছে কি না তা নিশ্চিত হওয়া উচিত। এখানে বলে রাখা দরকার, আধুনিক উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন আলট্রাসনোগ্রাফি যন্ত্রের সাহায্যে অপেক্ষাকৃত কম বয়সের ভ্রূণ শনাক্ত এবং সঙ্গে হূৎস্পন্দনও বোঝা যায়।

ভ্রূণের বয়স নির্ধারণ
ভ্রূণের উচ্চতা, মাথার দুই প্রান্তের দূরত্ব, পায়ের বড় অস্থি ভ্রূণের বয়সের সঙ্গে সুনির্দিষ্ট সামঞ্জস্য রেখে বৃদ্ধি পায়। আর আলট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে এই পরিমাপগুলো নিয়েই ভ্রূণের বয়স নির্ধারণ করা হয়। পেটের পরিধির মাপ, পায়ের বড় অস্থি এবং মাথার দুই প্রান্তের দূরত্ব দিয়ে ভ্রূণের ওজন সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পাওয়া যায়।

গর্ভস্থ শিশুর বিভিন্ন বিকৃতি
আলট্রাসনোগ্রাফির সাহায্যে গর্ভস্থ শিশুর বিকৃতি নির্ণয় করা যায়। যেমন, মাথায় অতিরিক্ত পানি জমা, মাথাবিহীন ভ্রূণ, খর্বাকৃতি, মেরুদণ্ডের বিকৃতি, হূৎপিণ্ডের সমস্যা, প্রস্রাবের থলের বা নালির সমস্যা, ঠোঁট ও মুখের তালুর সমস্যা ইত্যাদি।

গর্ভফুলের অবস্থান জানা
গর্ভকালীন সময়ে তৈরি হয় গর্ভফুল, যা জরায়ুর ভেতরের দেয়ালে লেগে থাকে। মা ও ভ্রূণের যোগাযোগ এই গর্ভফুলের মাধ্যমে হয়। গর্ভফুল জরায়ুর কোন অবস্থানে আছে তা জানা গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভফুল জরায়ুর নিচের দিকে থাকলে এ অবস্থাকে বলা হয় প্লাসেন্টা প্রিভিয়া।
এসব ক্ষেত্রে গর্ভকালীন প্রচুর রক্তপাত হতে পারে। গর্ভফুল নিজেই স্বাভাবিক প্রসবের রাস্তা বন্ধ করে দিতে পারে। আলট্রাসনোগ্রাফি করে গর্ভফুলের অবস্থান নির্ণয় করা হয়।

ভ্রূণের সংখ্যা নির্ণয়
ভ্রূণের সংখ্যা এক, দুই, তিন বা এর চেয়ে বেশি হতে পারে। আলট্রাসনোগ্রাফি করেই ভ্রূণের সংখ্যা নির্ণয় করা হয়।

গর্ভাশয়ের পানির পরিমাণ বের করা
গর্ভাশয়ের থলে তরল দিয়ে পূর্ণ থাকে। এই তরলকে বলা হয় অ্যামনিয়টিক ফ্লুইড। এই তরলের মধ্যেই ভ্রূণ ডুবে থাকে। গর্ভাশয়ের থলের তরলের পরিমাণ খুব কমে গেলে বা বেশি হয়ে গেলে তা ক্ষতিকর। আলট্রাসনোগ্রাফির সাহায্যে এই পানির পরিমাণ নির্ধারণ করা যায়।
এগুলো ছাড়াও গর্ভস্থ শিশুর প্রতি মিনিটে শ্বাস-প্রশ্বাসের সংখ্যা, হূৎস্পন্দনসহ ভ্রূণের বাহ্যিক অবস্থা, জরায়ুর ভেতরই ভ্রূণের মৃত্যু (আইইউএফডি), জরায়ুর বাইরে ভ্রূণের অবস্থান, ব্লাইটেড ওভাম (গর্ভাশয়ের থলের ব্যাস ২৫ মিলিমিটার বা এর বেশি কিন্তু ভ্রূণের অনুপস্থিতি) ইত্যাদিও আলট্রাসনোগ্রাফি করলে বোঝা যায়।

ডপলার আলট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষা
এটি হচ্ছে বিশেষ ধরনের আলট্রাসনোগ্রাফি, যার মাধ্যমে রক্তনালিতে রক্তের প্রবাহের দিক এবং রক্তের গতিপ্রকৃতি নির্ণয় করা যায়। এর মাধ্যমে সাধারণত ভ্রূণের রক্তনালিগুলো পর্যবেক্ষণ করা হয়, যেমন হূৎপিণ্ডের প্রকোষ্ট, হূৎপিণ্ড থেকে বের হওয়া প্রধান ধমনি, মস্তিষ্কের রক্ত সরবরাহকারী ধমনি, জরায়ুর ভেতরের রক্তনালি, বড় শিরা, যা হূৎপিণ্ডে প্রবেশ করে। হূৎপিণ্ডের ত্রুটি, রক্তশূন্যতা, অক্সিজেন-স্বল্পতা ডপলার অতিশব্দ পরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা যায়। ত্রিমাত্রিক ও চতুর্মাত্রিক সনোগ্রাফির মাধ্যমে ভ্রূণের ত্রিমাত্রিক ছবি মনিটরে দেখা যায়।

কখন আলট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষা করতে হবে
গর্ভাবস্থায় আলট্রাসনোগ্রাফি বা অতিশব্দ পরীক্ষা করার কোনো নির্ধারিত সময়সূচি নেই। কোনো সমস্যা বা সন্দেহ থাকলে পরীক্ষাটা করতে হবে। গর্ভধারণ করার সাত সপ্তাহ পর আলট্রাসনোগ্রাফি করলে গর্ভস্থ শিশুকে দেখা যায় এবং হূৎপিণ্ডের চলাচল বোঝা যায়। ১১ থেকে ১৪ সপ্তাহের মধ্যে নাকের হাড় এবং ঘাড়ের পেছনের দিকের পানিপূর্ণ থলে দেখা হয়, যার মাধ্যমে মানসিক ও শারীরিক ত্রুটিযুক্ত শিশু প্রসবের আশঙ্কা থাকলে তা বোঝা যায়। ১৮ থেকে ২০ সপ্তাহের দিকে ভ্রূণের গঠনগত ত্রুটিগুলো ভালো বোঝা যায়। ৩২ সপ্তাহের সময় সাধারণত ভ্রূণের বৃদ্ধি, ওজন, বাহ্যিক অবস্থা দেখা হয়। আগে করা সনোগ্রাফিগুলোতে কোনো ত্রুটি সন্দেহ করলে এ পর্যায়ে তা মিলিয়ে দেখা হয়। ২৪ সপ্তাহের পর গর্ভস্থ শিশুর লিঙ্গ নির্ধারণ করা যায়। তবে চিকিৎসা-সংক্রান্ত বিশেষ কারণ ছাড়া লিঙ্গ উল্লেখ না করাই ভালো। বিশ্বের অনেক দেশেই গর্ভস্থ শিশুর লিঙ্গ উল্লেখ না করার বিষয়ে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।

আছে কিছু ক্ষতিকর দিক
এক্স-রে, সিটিস্ক্যান ইত্যাদি পরীক্ষায় উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন রশ্মি ব্যবহার করা হয়, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু আলট্রাসনোগ্রাফিতে অতিশব্দ তরঙ্গ ব্যবহার করা হয়। এই তরঙ্গের উল্লেখ করার মতো ক্ষতিকর দিক এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। এটাও বলে রাখা ভালো যে সনোগ্রাফির মাধ্যমে তথ্য পাওয়ায় ক্ষেত্রে একটা ভালো যন্ত্র থাকা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনিভাবে যিনি পরীক্ষাটি করছেন তাঁর দক্ষতাও রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
এ ছাড়া পাশ্র্বপ্রতিক্রিয়া নেই বলে গর্ভাবস্থায় ঘন ঘন আলট্রাসনোগ্রাফি করা ঠিক নয়। নির্দিষ্ট কারণে বা কোনো তথ্যের প্রয়োজন হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পরীক্ষাটি করানো উচিত।

সূত্রঃ প্রথম আলো, জুলাই-২০০৯

হূদরোগ এড়াতে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন

ফজলে রাব্বী খান

ডায়াবেটিস নিয়ে গণসচেতনতা এখন অনেক বেড়েছে। শুধু ডায়াবেটিস রোগী নয়, সাধারণ মানুষ ডায়াবেটিস-সংক্রান্ত তথ্য ও আলোচনার প্রতি অধিক আগ্রহী হচ্ছে। এই প্রবণতার সুফল যেমন আছে, তেমনি কুফলও আছে। তথ্য ও আলোচনার জন্য অনেক সময় মানুষ যথাযথ নয় এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের দ্বারস্থ হয়। ফলে ভুল ও বিভ্রান্তিকর ধারণাও লাভ করে অনেকে। আসুন, জেনে নিই এ সম্পর্কে।

ডায়াবেটিস কী?

আমাদের শরীরে শর্করা বা চিনিজাতীয় খাবারের প্রয়োজনীয় বিপাক না হলে রক্তে অব্যবহূত শর্করা বা চিনির পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। এ অবস্থাকে বলা হয় ডায়াবেটিস। প্রধানত দুটি কারণে এ রকম অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। শরীরে অগ্ন্যাশয় (প্যানক্রিয়াস) গ্রন্থিতে ইনসুলিন হরমোন নিঃসরণকারী বিটা সেলের পরিমাণ ব্যাপক হারে হ্রাস পাওয়া এবং বিটা সেল থেকে নিঃসৃত ইনসুলিন যদি কোষের ওপর সঠিকভাবে কাজ করতে না পারে। এ ক্ষেত্রে অগ্ন্যাশয় গ্রন্থিতে বিটা সেলের পরিমাণ শূন্যের কোঠায় পৌঁছলে তখন ইনসুলিন বাইরে থেকে নেওয়া (ইনজেকশনের মাধ্যমে) ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। এ ধরনের ডায়াবেটিসকে টাইপ-১ বা ইনসুলিননির্ভর ডায়াবেটিস বলে। অপরদিকে শরীর যখন ইনসুলিন তৈরি করতে পারে, অর্থাৎ সামান্য পরিমাণ বিটা সেল উপস্থিত থাকে কিন্তু শর্করার বিপাকের জন্য তা পর্যাপ্ত নয়, এ ধরনের ডায়াবেটিসকে টাইপ-২ ডায়াবেটিস বলে। এ ধরনের ডায়াবেটিস কিছু নির্দিষ্ট নিয়মকানুন মেনে চললে অর্থাৎ প্রাত্যহিক জীবনে সুনিয়ন্ত্রণ এলে ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণ থাকে।

ডায়াবেটিস দিন দিন যে প্রধান কয়েকটি জটিলতা তৈরি করে তা হলো, রক্তনালি ও হূৎপিণ্ডের নানা রোগ, চোখের রোগ ও কিডনির জটিলতা। আজ হূৎপিণ্ডের রোগ নিয়ে বলা হলো।

রক্তনালির প্রাচীরের পুরুত্ব বেড়ে যাওয়া (অ্যাথেরোসক্লেরোসিস)

শরীরে শর্করা বিপাকে গণ্ডগোল দেখা দিলে বাকি দুটি প্রধান খাদ্য উপাদান প্রোটিন বা চর্বিজাতীয় খাদ্যের বিপাকেও সমান গণ্ডগোল দেখা দেয়। এ কারণে শরীরে চর্বিজাতীয় খাবারের অনিয়ন্ত্রিত সঞ্চয় হয়ে থাকে। শরীরে বিভিন্ন স্থানে বিশেষত রক্তনালির প্রাচীরের বিভিন্ন স্তরে এভাবে চর্বি জমা হওয়ার ফলে রক্তনালির প্রাচীর পুরুত্ব অনেক বেড়ে যায়। এই অস্বাভাবিক ঘটনাকে অ্যাথেরোসক্লেরোসিস। রক্তনালির প্রাচীর মোটা ও শক্ত হয়ে যাওয়ার ফলে নালির মধ্য দিয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ রক্ত চলাচল বা পরিবহন ব্যাহত হয়ে থাকে। ফলে হূৎপিণ্ডের মধ্যে শরীরের প্রধান অঙ্গ পর্যন্ত রক্ত থেকে বঞ্চিত হয়। হূৎপিণ্ডে পর্যাপ্ত রক্ত না যাওয়ার ফলে নানা ধরনের মারাত্মক রোগ, যেমন−অ্যানজাইনা পেকটোরিস, হার্টঅ্যাটাক বা এমআই হতে পারে। এই দুটি রোগ থেকে মানুষের মৃত্যুও হতে পারে। ডায়াবেটিস অ্যাথেরোসক্লেরোসিস হওয়ার প্রধান কারণ, তবে একমাত্র কারণ নয়। সুতরাং অ্যানজাইনা বা হার্টঅ্যাটাক এড়ানোর জন্য ডায়াবেটিস কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে রক্তে শর্করার পরিমাণ নির্ণয় ছাড়াও বর্তমান একটি আধুনিক পরীক্ষা, রক্তের এইচবিএ১সি-এর পরিমাণ দেখা যেতে পারে। এই পরীক্ষাটির মাধ্যমে রক্তের দীর্ঘমেয়াদি শর্করা পরিমাণ জানা যেতে পারে। প্রতি তিন মাস পর পর এই পরীক্ষা করা যেতে পারে। রক্তের এইচবিএ১সি-এর পরিমাণ ৭ ভাগের নিচে থাকলে বোঝা যাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

মনে রাখতে হবে, ডায়াবেটিস উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে যুক্ত হলে হার্টঅ্যাটাকসহ হূদযন্ত্রের অন্যান্য জটিলতা বহুগুণ বেড়ে যায়। একটি সমীক্ষা না দিলেই নয়। সম্প্রতি জানা গেছে, এইচবিএ১সি শতকরা প্রতি ১ শতাংশ কমলে এমআই হওয়ার আশঙ্কা ১৪ শতাংশ কমে যায়। সঙ্গে সঙ্গে রক্তনালির অন্যান্য রোগও ৪৩ শতাংশ কমে যায়। অন্যদিকে কমার পরিবর্তে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে এইচবিএ১সি বাড়লে জটিলতাও সে হারে বাড়তে থাকে।

কী করতে হবে
কাজেই ডায়াবেটিসের প্রাত্যহিক মাত্রা ও জটিলতা সম্পর্কে খুব সজাগ হতে হবে। �� রক্তে চিনির পরিমাণ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। যেমন− অভুক্ত অবস্থায় ৬ মিলিমোলের নিচে এবং খাওয়ার পরে থাকতে হবে ৮ মিলিমোলের নিচে। অন্যদিকে এইচবিএ১সি থাকতে হবে ৭ শতাংশের নিচে।

  • রক্তচাপ যেন অবশ্যই ১৩০/৮০ এর নিচে থাকে।
  • কোলেস্টেরল এলডিএল ১০০ মিলিগ্রাম/ডিএলের নিচে এবং এইচডিএল ৪০ (পুরুষের ক্ষেত্রে) এবং ৫০ (মেয়েদের ক্ষেত্রে) মিলিগ্রাম/ডিএলের ওপর থাকতে হবে। টাইগ্লিসারাইড যেন অবশ্যই ১৫০ মিলিগ্রাম/ডিএলের নিচে থাকে।
কাজেই নিজে নিজে নিয়মিত ডায়াবেটিসের মাত্রা নিরূপণ করে অস্বাভাবিক কিছু মনে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অন্যদিক হূৎপিণ্ডের অবস্থা জানার জন্য বছরে অন্তত দুবার হূদরোগ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে হবে।

শিশুর স্বাভাবিক শ্বাসহার

প্রণব কুমার চৌধুরী
সহকারী অধ্যাপক, শিশু বিভাগ
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ।

এক: প্রতি মিনিটে শিশুর শ্বাসের হার গুণে দেখে তার শ্বাসকষ্ট সম্পর্কিত ভালো তথ্য মেলে। শিশুবয়সের অনেক নিউমোনিয়া, যা ডাক্তারি স্টেথোতে ধরা পড়ে না, এমনকি এক্সরে তো আসে না, এর বড় অংশ শুধু শিশুর প্রতি মিনিটে শ্বাসহার গুনে আগেভাগে নির্ণয় করা যায়।

দুই: কিন্তু শিশুর শ্বাসহার গুনতে হবে শিশুকে শান্ত অবস্থায় পর্যবেক্ষণ করে। কান্নারত কিংবা ধস্তাধস্তি করে বা খাওয়ানোর পর্বে শ্বাসহার গণনা ভুল হতে পারে। বুকের দুধ পানরত শান্ত অবস্থায় শিশুর শ্বাসের হার পুরো এক মিনিট সময়কাল ধরে গণনা করা উচিত।

তিন: বিভিন্ন বয়সের শিশুর প্রতি মিনিটে স্বাভাবিক শ্বাস হাতের ঊধ্র্বসীমা নিম্নরূপ−
দুই বছর−প্রতি মিনিটে ৪০ বার, দুই থেকে ছয় বছর−প্রতি মিনিটে ৩০ বার, ছয় থেকে ১০ বছর−প্রতি মিনিটে ২৫ বার, ১০ বছরের ঊধ্র্বে−প্রতি মিনিটে ২০ বার।

শিশুর স্বাভাবিক মাথার বেড়
এক: জন্নকালীন ৩৫ সেন্টিমিটার (১৪ ইঞ্চি), ছয় মাস ৪৩.৫ সেন্টিমিটার (১৭ ইঞ্চি), দুই বছর বয়সে ৪৯ সেন্টিমিটার (১৯ ইঞ্চি)।

দুই: দুই থেকে সাত বছর বয়সে শিশুর মাথার বেড় বার্ষিক প্রায় আধা সেন্টিমিটার করে বাড়ে।
আট থেকে ১২ বছর সময়কালে শিশুর মাথার বেড় গড়ে পৌনে এক সেন্টিমিটার করে বাড়ে।

তিন: পদ্ধতি মেনে শিশুর মাথার বেড়ের পরিমাণ নেওয়া উচিত। বয়স অনুযায়ী মাথার বেড় সঠিক আছে কি না সে জন্য নির্দিষ্ট চার্ট আছে।

আকস্মিক বিষক্রিয়ায় চারকোল

স্বাস্থ্যকুশল প্রতিবেদক
আকস্মিক বিষক্রিয়ার উপসর্গ

বাচ্চা কী ধরনের, কতটুকু পরিমাণ বিষাক্ত বস্তু খেয়ে ফেলেছে এর ওপর নির্ভর করে উপসর্গ দেখা দেয়। কিছু বিষাক্ত বস্তু আছে, যা খাওয়ার পর কিছু নগণ্য উপসর্গ দেখা দেয়। অন্যদিকে কিছু বিষাক্ত বস্তু খাওয়ার পর বমি বমি ভাব, বমি হওয়া, ঝিমুনি, মুখ ও খাদ্যনালি জ্বালাপোড়াসহ বেশ কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে। কিছু বিষ আছে, যেগুলো খুবই মারাত্মক এবং অল্প পরিমাণই ভয়ংকর সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে−যেমন খিঁচুনি, হূদ্যন্ত্র ও শ্বাসযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়া; এমনকি মৃত্যুও ঘটতে পারে। বাসাবাড়িতে মাঝেমধ্যে বড়রা কোনো কাজ করার সময় ভুলে বিভিন্ন জিনিস বাচ্চাদের নাগালে রেখে দেয়। তা দিয়ে আকস্মিক বিষক্রিয়া দেখা দিতে পারে। মাঝেমধ্যে বাচ্চারা উঁচু শেল্ফে রাখা জিনিসপত্রের প্রতিও কৌতূহল হয় এবং তা নাগালে পাওয়ার চেষ্টা করে, যা দিয়ে বিষক্রিয়া হতে পারে।

আকস্মিক বিষক্রিয়া বা অ্যাকসিডেন্টাল পয়জনিংয়ের শিকার বাচ্চারাই বেশি। অনিচ্ছাকৃতভাবে আকস্মিক বিষক্রিয়া হয়ে থাকে। বাচ্চারা খুব কৌতূহলী হয় এবং নতুন কোনো জিনিস পেলেই তা মুখে দিতে চায়। কিন্তু জিনিসটি ক্ষতিকর কি না তা বুঝতে পারে না। বড়রা টক বা তিতা স্বাদ থেকে বিষ এবং খাদ্যবস্তুর পার্থক্য ধরতে পারে। কিন্তু শিশুরা সেটা বুঝতে পারে না। আবার অনেক শিশু ট্যাবলেট ও ক্যাপসুলকে চকলেট মনে করে। মূলত ছেলেবাচ্চাদের বিষক্রিয়া হয় যাদের বয়স তিন বছরের নিচে। এই বয়সের বাচ্চারা খুবই কৌতূহলী হয় এবং তারা নিরাপদ কিংবা বিপজ্বনক বস্তুর তফাত ধরতে পারে না।

একটি বাসায় সচরাচর বিভিন্ন ধরনের ওষুধ−যেমন জ্বরের ওষুধ, ঠান্ডাকাশির ওষুধ, মাউথ ওয়াশ, অ্যান্টিসেপটিক, অ্যান্টিবায়োটিক, ঘুমের ওষুধ বা হূদরোগের ওষুধ থেকে থাকে।

আরও থাকে বিভিন্ন ধরনের সাবান, ডিটারজেন্ট, ব্লিচিং পাউডার, ডিশ ওয়াশিং পাউডার ইত্যাদি।

প্রসাধনীর মধ্যে থাকে বিভিন্ন ধরনের ক্রিম, লোশন, শ্যাম্পু, সুগন্ধি, আফটার শেভ ইত্যাদি। অন্যান্য জিনিসের মধ্যে থাকে কেরোসিন, সিগারেট, আঠা, ব্যাটারি, কীটনাশক ইত্যাদি।

ন্যাপথলিন প্রতিটি বাড়িতেই রাখা হয়, যা আকস্মিক বিষক্রিয়ার অন্যতম কারণ।

চিকিৎসা
বিষক্রিয়ার ধরনের ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হয়।
অ্যাকটিভেটেড চারকোল: এটি বিষকে পরিশোষণ করে শরীরে বিষের শোষণকে বাধা প্রদান করে এবং মলের সঙ্গে শরীর থেকে বিষ বের করে দেয়। কিন্তু এটি বিষ খাওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে খাওয়াতে হবে। তাই বাসায় সব সময় কিছু অ্যাকটিভেটেড চারকোল রাখা জরুরি। বাজারে আলট্রাকার্বন নামে জার্মানের তৈরি অ্যাকটিভেটেড চারকোল পাওয়া যায়। যেকোনো ভালো ওষুধের দোকানে আলট্রাকার্বন পাওয়া যাবে।

পর্যবেক্ষণ
কিছু বিষ আছে, যা একটু দেরি করে ক্রিয়া শুরু করে। তাই রোগীকে হাসপাতালে সম্ভব হলে দিনরাত পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। হূদ্যন্ত্র ও শ্বাসযন্ত্রের ক্রিয়া, রক্তচাপ ইত্যাদি সব সময় নজরে রাখতে হবে।

রক্ত পরীক্ষা
রক্তে বিষের পরিমাণ মাপতে হবে এবং তা পরবর্তী চিকিৎসা নির্ধারণ করতে সাহায্য করবে।
প্রতিবিষ বা অ্যান্টিডট: এই প্রতিবিষগুলো বিষের কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। অ্যাকটিভেটেড চারকোলও এই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত।

প্রতিরোধ

  • বিষক্রিয়ার ক্ষেত্রে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই বেশি কার্যকর। কিছু সাধারণ পদক্ষেপ একটি বাচ্চাকে বিষাক্ত বস্তু থেকে দূরে রাখতে পারে।
  • যাবতীয় ওষুধ, কীটনাশক, বাগান করার সামগ্রী ও রাসায়নিক দ্রব্য সব সময় বাচ্চাদের নাগালের বাইরে রাখতে হয়।
  • যাবতীয় আলমারি, শেল্ফ ইত্যাদিতে অবশ্যই তালা ব্যবহার করতে হবে।
  • বাচ্চাদের ওষুধ খাওয়ানোর আগে অবশ্যই মোড়কের গায়ে নাম ও ব্যবহার-প্রণালী দেখে নিতে হবে।
  • ওষুধ খাওয়ার সময় বাচ্চাদের আড়ালে খেতে হবে, যাতে তারা ওষুধ খাওয়া দেখে কৌতূহলী বা উৎসাহিত না হয়।
  • মায়েদের অবশ্যই হাতের ব্যাগ বাচ্চাদের নাগালের বাইরে রাখতে হবে। বাতিল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ব্যাটারি, বিষ, ওষুধ ও রাসায়নিক দ্রব্য সঠিক জায়গায় ফেলে দিতে হবে।
  • পানীয়র বোতলে বিষ বা রাসায়নিক বস্তু রাখা যাবে না।
  • বিষ ও ওষুধগুলো অবশ্যই নির্দিষ্ট মোড়কে বা বোতলে রাখতে হবে।
  • বাড়িতে অবশ্যই বিষাক্ত গাছপালা রাখা যাবে না। বাচ্চাপালক বা মা-বাবাদের প্রাথমিক চিকিৎসার প্রশিক্ষণ নেওয়া উচিত এবং একটি প্রাথমিক চিকিৎসার বাক্স বাড়িতে রাখা উচিত। সেটিতে আলট্রাকার্বন রাখতে হবে।
  • সর্বোপরি আকস্মিক বিষক্রিয়া থেকে প্রতিরোধ ও প্রতিকার তাৎক্ষণিকভাবে জানার জন্য নিকটবর্তী বিষক্রিয়া তথ্যকেন্দ্রের ফোন নম্বর জেনে রাখতে হবে।
আকস্মিক বিষক্রিয়া থেকে শিশুকে রক্ষা করতে হলে সতর্ক থাকাটাই সবচেয়ে ভালো উপায়।

আলট্রাকার্বনের সেবনবিধি
বিষক্রিয়ার জন্য কোনো রকম দ্বিধা ছাড়াই ৫০টি ট্যাবলেট গুলিয়ে পেস্ট বানাতে হবে এবং সেটি রোগীকে খাওয়াতে হবে এবং সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চাকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিতে হবে। পেস্টিসাইড বা কীটনাশকজনিত বিষক্রিয়ার ক্ষেত্রে আলট্রাকার্বন সেবন করা যাবে না।

সূত্রঃ প্রথম আলো- জুলাই, ২০০৯

হূদয় ভালো তো হূদরোগ বিদায়

এস কে অপু
হূদরোগ বিশেষজ্ঞ
ময়মনসিংহ চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়

হার্ট অ্যাটাক হচ্ছেই। এ হচ্ছে নেতিবাচক প্রভাব। রাত-দিন খাটছে, সৎ থাকছে। তবু নিগৃহীত। জীবনযুদ্ধে নেই পুরস্কার। পদোন্নতি নেই। বসাচ্ছে এনে অযোগ্য লোক। এ যেন মানসিক যন্ত্রণা আর নিগ্রহ। বাড়ছে উচ্চ রক্তচাপ, ঘটছে হার্ট অ্যাটাক। কাজপাগল, ওপরে ওঠার জন্য খুব আগ্রহী কিংবা সারাক্ষণ প্রতিযোগিতা করতে চাওয়া বা আক্রমণাত্মক, তিরিক্ষি মেজাজের লোকেরাই ‘টাইপ-এ’ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হন। আজকাল এসব লোকের চেয়ে সুশীল সমাজে বেড়ে যাচ্ছে হার্ট অ্যাটাক। দেখা যাচ্ছে, যাদের জীবন চলছে দ্রুতগতিতে−ব্যস্ততায়, প্রতিযোগিতায় বা দ্রুত কথা বলে, তারা হূদয়টাকে রাখে সজীবতায়। ‘টাইপ-এ’ লোকের হূদরোগও কমে গেছে।

চাপ মোকাবিলা করুন দৃঢ়ভাবে
থাকুক না জীবনের চাপ। থাকুক লড়াই। যদি থাকে সমাজে পুরস্কার−হয় না হূদয় আহত। সৎ ও যোগ্যের প্রশংসা, ভালো কাজের পুরস্কার হলে, হার্ট হয়ে ওঠে সজীব-সতেজ। আজকাল গবেষণায় নতুন সুর−কোনো ব্যক্তির আবেগের নেতিবাচক দিক কিংবা ব্যক্তিত্বের নেতিবাচক দিকের কারণে হূদয় অকালেই ভেঙে পড়ছে। মৃত্যুও হচ্ছে। তাই চাপ মোকাবিলা করতে হবে দৃঢ়ভাবে।

দূরে ঠেলুন বিষণ্নতা
‘বিষণ্নতা’ মনকে করে কাবু। এতে হার্ট অ্যাটাক অতি দ্রুত ঘটে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বিষণ্ন মনের লোক তাদের হার্ট অ্যাটাকে, বিষণ্ন নয় এমন রোগীর তুলনায় চার গুণ বেশি ঝুঁকি। সুতরাং হার্ট অ্যাটাকের রোগীদের চাই মনের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। যদি বিষণ্ন মনে থাকে সারাক্ষণ, এসব রোগী কয়েক বছরের মধ্যেই আবার হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়। বিষণ্ন মানুষ বদভ্যাসে জড়িয়ে পড়ে। ধূমপান বা মদ্যপান করে। সুষম খাবার খায় না। ব্যায়াম করে না। মন কেবলই উথালপাথাল। মনের ভেতর সব সময় নেতিবাচক প্রশ্ন। মন হয় ক্ষতবিক্ষত।

প্রফুল্ল থাকুন মন
বিষণ্ন ও ভগ্নমন থেকেই বাড়ে হূৎস্পন্দন। বেড়ে যায় স্ট্রেস হরমোনের মান। হূদ-ছন্দের ওঠানামা হয় অসংগতিপূর্ণ। রক্তের জমাটবাঁধা প্রক্রিয়া বেড়ে রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করে। রক্তনালির পথ বন্ধ হয়ে ঘটায় হার্ট অ্যাটাক। বিষণ্ন মনের লোকদেরই রক্তনালিতে মন্দ কোলেস্টেরল বেশি জমে। তাই প্রফুল্ল মন নিয়ে থাকা ভালো।

ঝেড়ে ফেলুন দুশ্চিন্তা
দুশ্চিন্তা বেশি হলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়বেই। অযথা দুশ্চিন্তার কোনো মানেই হয় না। এই চাপ আর দুশ্চিন্তায় বেড়ে যায় অ্যাড্রেনালিন হরমোন। অন্যান্য হরমোনও। বেড়ে যায় হূৎস্পন্দন। রক্তচাপ বাড়ে। রক্তে বাড়ে চর্বিকণা। যতবার বাড়ে রক্তচাপ, ততই হার্টের রক্ত ধমনির গায়ে পড়ে চর্বির আস্তরণ। হার্টের মাংসপেশিতে হয় রক্তের অভাব। তৈরি হয় কোলেস্টেরল। জমে ধমনির গায়ে। হার্টের রক্তনালি বন্ধ। ঘটে হার্ট অ্যাটাক। তাই দুশ্চিন্তা কমিয়ে ফেলুন। সম্ভব হলে একদম নয়।

রাগ নয় একদম
রাগ হূদ্যন্ত্রের মারাত্মক শত্রু। অল্পস্বল্প রাগ করুন। কিংবা রাগ পুষে না রেখে সরাসরি প্রকাশ করুন। ভালো। কিন্তু প্রচণ্ড রাগ শুধু হার্টকেই নাড়া দেয় না, রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়াতেও প্রভাব ফেলে। রক্তনালিগুলো সংকুচিত হয়। দেহে রক্তপ্রবাহ কমে যায়। এমনকি মস্তিষ্কের, হূৎপিণ্ডে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। হঠাৎ রেগে দেখুন। শ্বাস-প্রশ্বাস বেড়ে যাবে। হার্টবিট বেড়ে যাবে। রক্তচাপ বাড়বে। চোখের মণি বড় হবে। সঙ্গে রক্তে শর্করা বেড়ে যাবে। হজম কমে যাবে। অন্যান্য অঙ্গের রক্ত চলে আসে রক্তনালি দিয়েই কেন্দ্রীয় স্মায়ু, পেশি ও হার্টে। মস্তিস্ক থেকে সংকেত দেবে হরমোন নিঃসরণে। নাম ‘নর-অ্যাড্রেনালিন’। রক্তে বেড়ে যাবে চর্বি থেকে ফ্যাটি এসিড। রক্তনালির গায়ে আস্তরণ ফেলে ধমনির পথ সরু হবে। রক্ত জমাট বেঁধেই ঘটে অক্সিজেনের অভাব। এরপর হার্ট অ্যাটাক। তাই রাগ ভালো না। রাগ আর দুশ্চিন্তা মিলে হূদয়ের ছন্দে ঘটে অনিয়ম। সৃষ্টি হয় নেতিবাচক আবেগ। তাই আবেগগুলো দমন করতেই হবে বা সংযত করতে হবে। বিশেষজ্ঞের মতে, যেসব আবেগ হূদরোগের সঙ্গে জড়িত, তা দূর করা যায় অন্যান্য মানুষের সঙ্গে কথা বলে, হাসিখুশিতে। প্রয়োজনে জীবনসঙ্গীর সঙ্গে। কথা বলুন মন খুলে। বিশ্বাস করুন সহজে। দেখবেন আপনার জীবনসঙ্গী হূদয় খুলে দেবে অকাতরে। তা না হলে হূদয়ে ঘটবে তোলপাড়। ততই ধরা পড়বে হার্টের পাগলামি। কখনো দেখবেন, কিছু হূদরোগী বা হূদরোগপ্রবণ লোক হাসেও না, কাঁদেও না। কেমন জানি মুখ ভার। যেন ‘ক্লেশগ্রস্ত মানুষ’। কোনো ধরনের আবেদন সহ্য হয় না। হাসে না। যেন হাসতে তাদের মানা। সারাক্ষণ ভ্রূ কুঁচকে থাকে। কাজেকর্মে সারাক্ষণ অভিযোগ। রাগ রাগ ভাব। যেন নিরাপত্তার অভাব। তাতে স্ট্রেস হরমোন বেড়েই চলে। এই দুশ্চিন্তা, পীড়ন, নানা বিপত্তি, আবেগ আটকে রাখা সবই বাড়িয়ে দেয় রক্তচাপ। যদি প্রতিদিন এসব ঘটতেই থাকে, হয়ে ওঠে ক্ষতিকর।

আন্তরিক হোন যথেষ্ট
যতই থাকুক হূদরোগের ঝুঁকি, সহজ পথেই তা দূর করা যায় বা হওয়ার আগেই রোধ করা যায়। বাড়িয়ে দিন সাহায্যের হাত। কাজ করুন মানুষের জন্য। প্রয়োজনে কোনো প্রতিষ্ঠানে। মিশে যান শিশুদের মধ্যে। খোলামেলা কথা বলুন। নিঃসঙ্গ আত্মীয়ের সঙ্গে সময় কাটান কথা বলে। ছোট ছেলেমেয়েদের কাছে নিয়ে বসে বই থেকে পড়ান, গল্প বলুন। এতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। হূদয় সতেজ হবে। যদি চাকরি থেকে অবসর নেন, বেড়ে যায় আরও মানসিক চাহিদা। ফুরফুরে মন নিয়ে বাগান করুন। নতুন ভাষা শিখুন। কম্পিউটারে হাত দিন। স্মৃতিচারণা করুন, আত্মকথা লিখুন। বিকেলে বেড়াতে যান। একটু শরীরচর্চাও ভালো। সবার সঙ্গে মজা করে কথা বলুন। হাসুন। বন্ধুদের সঙ্গে খেলুন, পিকনিকে যান। মেলা থেকে ঘুরে আসুন। বেশি করে মেলামেশা করুন। আরও আনন্দ পাবেন। কথা বলবেন খোলা আকাশের মতো। আবার অন্যের কথাও শুনবেন কিন্তু বিরক্ত না হয়ে, দাঁতে দাঁত না চেপে। শুনুন হেসে হেসে। যদি মনে দানা বাঁধতে চায় রাগ, শত্রুতা, বিষণ্নতা, দুশ্চিন্তা−ভেঙে গুঁড়িয়ে দিন মন থেকে। জীবনে একা না থেকে সময়ে বেছে নিন ভালো জীবনসঙ্গী। সে হবে আপনার প্রকৃত বন্ধু। একসময় ঘরে আসবে নতুন শিশু। যারা হবে জীবনের আরেক শক্তি, হবে অবলম্বন। সবাইকে নিয়েই বাঁচতে শিখতে হবে। মনটাকে সারাক্ষণ রাখুন খোলা আকাশের মতো। দেখবেন হূদরোগের ঝুঁকি কমে হূদয় ভরে যাবে ফুলের সৌরভে।

সূত্রঃ প্রথম আলো- জুলাই, ২০০৯

মায়ের দুধই শিশুর শ্রেষ্ঠ খাবার

মাহবুব মোতানাব্বি
সহকারী অধ্যাপক, শিশু বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, মায়ের দুধ নবজাতক শিশুর জন্য আদর্শ পুষ্টিকর খাবার। এতে সংক্রামক ব্যাধির আক্রমণ অনেক কমে যায়। মায়েদের স্তন ও ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে। পুনর্গর্ভধারণের দূরত্বও বেড়ে যায়। সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবেও জাতি উপকৃত হয়।

এসব সুফল পেতে হলে প্রথম ছয় মাসে নিরবচ্ছিন্ন মায়ের দুধ পান করাতে হবে। এর মানে হচ্ছে মায়ের দুধ ছাড়া শিশুকে কোনো খাবার বা পানি কিছুই দেওয়া যাবে না। ঘন ঘন বাধাহীনভাবে বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে হবে।

এ জন্যই সব মাতৃসেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য সফল মায়ের দুধ খাওয়ানোর ১০টি পদক্ষেপ অবশ্য প্রতিপাল্য হিসেবে গণ্য হয়।

কেন বাচ্চাকে শুধু মায়ের দুধ জন্নের পর প্রথম ছয় মাস খাওয়াতে হবে, এটা বোঝা খুবই জরুরি, যেভাবে যে অনুপাতে বাচ্চার খাদ্য উপাদান থাকা দরকার, তা শুধু মায়ের দুধেই আছে। গরুর দুধ মায়ের দুধের বিকল্প হতে পারে কি না−এ প্রশ্ন অনেক মা-ই করে থাকেন। এর সরাসরি উত্তর হচ্ছে ‘না’। কারণ গরুর দুধ ও মায়ের দুধে কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়ে গেছে। গরুর দুধে শর্করার পরিমাণ (৪.৬ গ্রাম/ ১০০ মিলিলিটার) মায়ের দুধের (৭.৪ গ্রাম/১০০ মিলিলিটার) প্রায় অর্ধেক। স্মেহ পদার্থ প্রায় কাছাকাছি হলেও গরুর দুধে সম্পৃক্ত স্মেহ পদার্থের পরিমাণ বেশি। আমিষ গরুর দুধে বেশি। এমন আমিষ গরুর দুধে থাকে যেগুলো সহজপাচ্য নয়। মস্তিষ্কের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় টরিন থাকে মায়ের দুধে। শরীরের তরলের আণবিক চাপ বজায় রাখার ক্ষেত্রেও মায়ের দুধ গরুর দুধের চেয়ে অনেক বেশি উপযোগী। প্রয়োজনীয় ভিটামিনও মায়ের দুধে গুরুর দুধের চেয়ে বেশি। কাজেই কোনো বিবেচনায়ই গরুর দুধ বা কৃত্রিম দুধ মায়ের দুধের চেয়ে বেশি উপযোগী হতে পারে না।

মায়ের দুধের উপকারিতা
শিশুর জন্য
সংক্রমণ প্রতিরোধ: ইমিউনো গ্লোবিউলিন ও অন্যান্য সংক্রমণ প্রতিরোধী পদার্থ মায়ের দুধে থাকে। এর সঙ্গে থাকে ল্যাকটোব্যাসিলাস, যা বাইফি ডাস্ নামের একরকম জীবাণু জন্নানোর জন্য প্রভাবক। এই জীবাণু ক্ষতিকর জীবাণুকে বাড়তে দেয় না।

অ্যালার্জি থেকে সুরক্ষা: মায়ের দুধের আমিষ বাচ্চার সুপরিচিত বলে তা কোনো অ্যালার্জি সৃষ্টি করে না। মায়ের দুধের দস্তা ও অসম্পৃক্ত দীর্ঘসূত্র ফ্যাটি এসিড বাচ্চার প্রতিরোধক্ষমতা গড়ে তোলে।

এ ছাড়া মায়ের দুধে পালিত বাচ্চাদের নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো দেখা গেছে:

  • আকস্মিক মৃত্যুর হার কমে যাওয়া
  • শিশুর ডায়াবেটিস, ক্যান্সার ও কর্ণপ্রদাহ কম হওয়া
  • টিকার দ্রুত কার্যকারিতা
  • দুধের বোতলজনিত দাঁতের সমস্যা থেকে মুক্তি
  • মানসিক, আবেগিক ও সামাজিক উন্নতি
  • উচ্চমাত্রার বুদ্ধিমত্তা।

মায়ের জন্য
জন্নের সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চাকে মায়ের দুধ দিলে পিটুইটারি গ্রন্থি নিঃসৃত অক্সিটসিন জরায়ুকে সংকুচিত করে রক্তক্ষরণ বন্ধ করে। ঘন ঘন মায়ের দুধ খাওয়ালে মাসিক পুনরায় শুরু হতে দেরি হয় এবং পরবর্তী গর্ভধারণ বিলম্বিত হয়।

মায়ের আরও যেসব সুবিধা দেখা যায় সেগুলো হলো:
  • গর্ভ-পরবর্তী বিষণ্নতা কমে যায়।
  • আবেগিক বন্ধনের কারণে শিশু নির্যাতন কমে যায়।
  • রাতে খাওয়ানো, ভ্রমণে খাওয়ানো সহজ হয়ে যায়।
  • আর্থিক বা অন্য কারণে বাচ্চার দুধ থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।

সমাজের জন্য
খরচের দিক থেকে দুধের কৌটার খরচ অনেক বেশি। ক্ষেত্রভেদে শিশুকে কৌটার দুধ খাওয়াতে দুই থেকে তিন হাজার টাকা মাসে লাগবে, যা কোনো কোনো পরিবারের সারা মাসের আয়ের সমান। খরচ বাঁচাতে গিয়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে যা খাওয়ানো হয় তাকে দুধ না বলে দুধের পানি বলাই শ্রেয়। কৃত্রিম দুধ না দেওয়ায় বেঁচে যাওয়া দুধ, তৈজস ও জ্বালানি খরচ পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য ব্যয় করা সম্ভব। মা ও শিশুর স্বাস্থ্য ভালো থাকায় চিকিৎসা পরামর্শ, ওষুধ, ল্যাব পরীক্ষা ও হাসপাতালে ভর্তির খরচ বেঁচে যায়।

কখন শুরু করবেন দুধ খাওয়ানো
জন্নের পর যত দ্রুত সম্ভব, সাধারণত এক ঘণ্টার মধ্যে মায়ের দুধ দিতে হবে। স্বাভাবিক নড়াচড়া, সজাগ থাকা, দুধ টানা ও কান্না দিয়েই বোঝা যাবে শিশু দুধ দিলে নিতে পারবে!

কীভাবে খাওয়াবেন?
দুধ খাওয়ানোর জন্য মায়ের দেয়ালে ঠেস দিয়ে বসাই উত্তম। বাচ্চার শরীর থাকবে মায়ের এক হাতের ওপর, আরেক হাত থাকবে মাথার নিচে। বাচ্চার শরীর মিশে থাকবে মায়ের শরীরের সঙ্গে। কোনোমতেই যাতে ঘাড় বাঁকা না হয়। বাচ্চার মুখ থাকবে পুরা খোলা। বাচ্চার থুতনি, মায়ের স্তন স্পর্শ করবে। নিচের ঠোঁট উল্টো করে খোলা থাকবে।

বাচ্চা যথেষ্ট দুধ পাচ্ছে কি-না
অনেক মা-ই বলেন তাঁর সন্তান যথেষ্ট দুধ পাচ্ছে না। আসলে যাচাই করে দেখতে হবে নিচের বিষয়গুলো।
  • ২৪ ঘণ্টায় অন্তত আট বার দুধ খাবে।
  • দুধ টানার গতি একবার খাওয়ার মধ্যেই কখনো কমবে, কখনো বাড়বে।
  • দুবার খাওয়ার মধ্যে সচেতন ও সন্তুষ্ট থাকবে।
  • পেশি দৃঢ় থাকবে এবং ত্বক থাকবে স্বাভাবিক।
  • ছয় থেকে আটবার প্রস্রাব হবে ২৪ ঘণ্টায়।
  • নিয়মিত ওজন বৃদ্ধি।
  • মায়ের স্তন খালি হওয়ার অনুভূতি।
এগুলো ঠিক থাকলে বুঝতে হবে দুধ না পাওয়ার ধারণাটি অমূলক। যে মায়েদের সন্তান জন্নের অব্যবহিত পরেই কর্মস্থলে যোগ দিতে হয়, তাঁরা বুকের দুধ চিপে বের করে রেখে যেতে পারেন।
প্রথমে স্তনের ওপর বুড়ো আঙ্গুল ও তর্জনী রেখে পেছনে টানতে হবে। তারপর আবার সামনের দিকে আনতে হবে। তারপর চিপে দুধ বের করতে হবে। এ ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।

কিছু সাধারণ সমস্যা
  • স্তনের বোঁটা ফেটে যাওয়া: সাময়িকভাবে নিঃসৃত দুধ দেওয়া লাগতে পারে। দুধের বোঁটায় ভ্যাসলিন অথবা নিঃসৃত দুধ লাগালেই যথেষ্ট।
  • স্তনে দুধ জমে যাওয়া: হাত দিয়ে অথবা পাম্প দিয়ে ঘন ঘন দুধ বের করে নেওয়া এবং সাময়িক পানি কম খাওয়া হচ্ছে এর সমাধান।
  • বাচ্চা দুধ টানতে না পারলে: তালুকাটা বাচ্চা দুধ টানতে না পারলে লম্বা হাতার চামচ দিয়ে খাওয়াতে হয়।
  • স্তনের বোঁটা ভেতরে ঢুকে থাকলে: হাত দিয়ে স্তনের বোঁটা টানতে হবে। বাচ্চাকে বারবার দুধ টানতে দিলেই সে তা পাবে।

বাচ্চার মায়ের দুধ না পাওয়া
মা যদি সত্যি বাচ্চাকে দুধ দিতে আগ্রহী থাকেন, তাহলে মায়ের দুধ না পাওয়া প্রায় অসম্ভব ও অবাস্তব ব্যাপার। গর্ভফুলের অংশবিশেষ ভেতরে থেকে গেলে তা দুধ নিঃসরক প্রোল্যাক্টিন হরমোনকে নিবৃত্ত করে। কোনো কোনো সময় পরিবেশগত কারণে দুধ নিঃসরণের অবচেতন ক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হতে পারে। মায়ের যথেষ্ট বিশ্রাম, পারিবারিক আবহাওয়া, দক্ষ যত্নের মাধ্যমে এটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। বাচ্চা যথাযথভাবে দুধ না টানলেও দুধ কম হতে পারে। এ জন্য সঠিক অবস্থানে, সঠিকভাবে দুধ টানতে দিতে হবে। বিশেষ ক্ষেত্রে কালিজিরা অথবা ডমপেরিডনজাতীয় ওষুধ দুধ বাড়ার জন্য কার্যকর হতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, জন্নের এক ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানো হলে নবজাতক মৃত্যুর হার ২২ শতাংশ কমানো সম্ভব। শুধু মায়ের দুধ খাওয়ানোর মাধ্যমে বছরে ৩৭ হাজার নবজাতকের জীবন রক্ষা পাবে। জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ৪৩ শতাংশ নবজাতক জন্নের এক ঘণ্টার মধ্যে মায়ের দুধ পায়। অথচ জন্নের পর প্রথম ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৬০ হাজার নবজাতক বছরে মারা যায়। এ ছাড়া প্রতিবছর জন্নের পর প্রথম ২৮ দিনে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার নবজাতক মারা যায়। এই ভয়াবহ চিত্র দেখলেই বোঝা যায় জন্নের পরপর শিশুকে মায়ের দুধ দেওয়া কতটা জরুরি।

বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য দশটি পদক্ষেপ
  • বুকের দুধ খাওয়ানোর ব্যাপারে একটি লিখিত নীতিমালা থাকবে, যা নিয়মিতভাবে সব স্বাস্থ্যসেবার কর্মীকে অবহিত করতে হবে।
  • স্বাস্থ্যসেবার কর্মীকে এই নীতি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
  • সব গর্ভবতী মাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সুফল ও ব্যবস্থাপনা অবহিত করতে হবে।
  • জন্নের আধ ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে বুকের দুধ দেওয়ার জন্য মায়েদের সহযোগিতা করতে হবে।
  • শিশুকে কীভাবে বুকের দুধ খাওয়াতে হয় এবং মায়েরা শিশুদের কাছে না থাকাকালীন অবস্থায় কীভাবে তা চালিয়ে যাওয়া যায়, তা মায়েদের শেখাতে হবে।
  • নিতান্তই চিকিৎসার প্রয়োজন ব্যতীত শিশুকে বুকের দুধ ছাড়া অন্য কোনো খাবার বা পানীয় দেবেন না।
  • মা ও শিশুকে প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা একই সঙ্গে থাকতে দিন।
  • শিশুর চাহিদামতো বুকের দুধ খাওয়ান।
  • বুকের দুধে অভ্যস্ত শিশুদের কোনো কৃত্রিম টিট, বোসিফাইয়ার, ডামি দেবেন না।
  • শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সহযোগী দল গঠনে উৎসাহ দিন। মা হাসপাতাল বা ক্লিনিক ছেড়ে যাওয়ার সময় এসব দলের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়ার জন্য বলে দিন।
সূত্র: ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যৌথ ঘোষণা

সফলভাবে বুকের দুধ খাওয়ানোর কিছু নির্দেশিকা
  • জন্নের পরপরই শিশুকে প্রথম শালদুধ খাওয়ান। এতে পুষ্টি ছাড়াও রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা থাকে। এটি প্রথম টিকার কাজ করে। বাচ্চাকে মায়ের সঙ্গে এক বিছানায় রাখতে হবে।
  • গর্ভবতী মাকে তাঁর পুষ্টি এবং শিশুর সুস্বাস্থ্যের জন্য বেশি খাবার দিতে হবে। স্বাভাবিক খাবারের চেয়ে রোজ এক মুঠো চাল, এক চামচ ডাল, এক চামচ তেল, এক মুঠো শাকসবজি ও সম্ভব হলে পাকা কলা খেতে হবে। বেশি পানি পান করতে হবে।
  • শিশুর ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধই যথেষ্ট: যতক্ষণ চায়, ততক্ষণ বুকের দুধ দিন। দুই দিকের বুক থেকে দুধ দিন।
  • শিশুর ছয় মাস পূর্ণ হলে মায়ের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য খাবার ও এর সঙ্গে খিচুড়ি দিন। তবে বোতলে অন্যখাবার দেবেন না।
  • যেকোনো অসুখে বুকের দুধ ও অন্যান্য খাবার বারবার খেতে দিন।

দরকার পরিবারের সহায়ক ভূমিকা
  • মায়ের প্রয়োজনীয় পৃষ্টি ও বিশ্রামের ব্যবস্থা করতে পরিবারের রয়েছে বিরাট ভূমিকা।
  • বুকের দুধ খাওয়ালে সৌন্দর্যহানি হয় না। গর্ভকাল থেকে দুধ খাওয়ানোয় সমর্থন দিন।
  • দুধ খাওয়ানোর উপযোগী পরিবেশ গড়ে তুলুন।

শিশুর খাদ্য বিধান অধ্যাদেশ

শিশুখাদ্য বাজারজাতকরণ নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী মায়ের দুধের বিকল্প অথবা সহায়ক শিশুখাদ্যের পাত্রের গায়ে পরিষ্কার বাংলায় আকর্ষণীয়ভাবে লেখা থাকতে হবে শিশুর জন্য মায়ের দুধই সর্বোৎকৃষ্ট। শিশুখাদ্যের কোনো বিজ্ঞাপনে শিশুর অথবা বোতলের ছবি ব্যবহার করা যাবে না। বিজ্ঞাপন উপহারসামগ্রী প্রদান অথবা অন্য কোনো উপায়ে কোনো ব্যক্তি মায়ের দুধের বিকল্প খাদ্যের ব্যবহার সম্প্রসারণের কোনো উদ্যোগ নিতে পারবে না। মায়ের দুধ খাওয়ানো অবশ্যই একটি অপরিহার্য জরুরি উদ্যোগ। এতে অবহেলার কোনো সুযোগ নেই। ব্যক্তি ও পরিবারের সঙ্গে রাষ্ট্রকেও এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে। মাতৃত্ব ছুটি বাড়িয়ে অন্তত এক বছর করা জরুরি। কর্মক্ষেত্রেও গড়ে তুলতে হবে বুকের দুধ খাওয়ানোর উপযোগী পরিবেশ।

কিছু জিজ্ঞাসা ও উত্তর
  • সব মা কি বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন?
উত্তর: হ্যাঁ। প্রত্যেক মা-ই বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন।
  • সব মায়ের কি পর্যাপ্ত বুকের দুধ হয়?
উত্তর: মায়েরা শিশুর চাহিদা অনুযায়ী দুধ দিলে পর্যাপ্ত বুকের দুধ তৈরি হবে। মায়ের নিজের ওপর আস্থাই আসল।
  • বুকের দুধ কি নষ্ট হতে পারে?
উত্তর: না। বুকের দুধ নষ্ট হয় না। বুকের দুধ সর্বদাই বিশুদ্ধ। শিশুর জন্য নিরাপদ।
  • বোতলে দুধ খাওয়ানো কি শিশুর জন্য বিপজ্বনক?
উত্তর: খুবই বিপজ্বনক! এতে অপুষ্টি ও ডায়রিয়া হতে পারে!

সূত্রঃ প্রথম আলো- জুলাই, ২০০৯